রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় ঘূর্নিঝড় আম্ফানে ক্ষতগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাধারণ (ক্ষুদ্র) মেরামত-সংস্কারের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে নাম সর্বস্ব স্কুল মেরামত করা হয়েছে। এমনকি কয়েকটি স্কুলে টিনসেড ভবন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় থাকলেও সেখানে কোন টিনসেড ভবন পাওয়া যায়নি।
গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটের আওতায় ঘূর্নিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের মেরামত-সংস্কারের জন্য প্রতিটা বিদ্যালয়ে দেড় লক্ষ টাকা করে উপজেলার ২৩টি বিদ্যালয়ে মোট ৩৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিতগ্রস্তের তালিকায় থাকা উপজেলার বেজগাতী মৈস্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ে দুইটি পাকাভবন। ভবন দুইটি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো কিনা এমন তথ্য দিতে পারেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। অথচ সরকারি টাকা বরাদ্দের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষ অফিস থেকে এ স্কুলটিকে আম্ফানে ক্ষতগ্রস্তের তালিকায় রাখা রয়েছে। এমনকি এ বিদ্যালয়ে কোন টিনের ঘর না থাকা সত্বেও প্রতিবেদনে একটি টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিদ্যালয়ের জন্য দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি। এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কল্পনা রানী জানান, বিদ্যালয়টি পূর্বে টিনসেড ছিলো। ২০১৭ সালে ভবন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ভবনের কিছু ক্ষতি হয়েছিলো।
তিনি আরও জানান, বরাদ্দকৃত টাকা এখনো উত্তোলণ করা হয়নি। কমিটি না থাকায় কাজ করা হয়নি। তবে একটি টিনসেড ঘর উত্তোলণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একইভাবে উপজেলার ইল্লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনসেড ভবন ক্ষতিগ্রস্তের জন্য দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হলেও সেখানে কোন টিনসেড ভবন পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষকেরা জানান, মূলত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যে সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুসম্পর্ক রয়েছে সেসব স্কুল আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমনকি অনেক স্কুলে একই সাথে দুইটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে চলতি বছরে নিয়োগ হওয়া নতুন শিক্ষকদের বেতন ভাতা করে দেয়ার নামে একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে দুই হাজার পাঁচশত টাকা করে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ভুক্তভোগিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস পূর্বে একযোগে ২৪টি বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজনে গিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষ কর্মকর্তা ফয়সল জামিল।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল জানান, যে সব শিক্ষ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার পর সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন করার পরপরই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে বিল দেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিল করার নামে কারো কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে উল্লেখ করেন।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক এস.এম ফারুক জানান, এবিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র: ব্রেকিং নিউজ