মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০২ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
করোনা চিকিৎসায় পরীক্ষামূলক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলো যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এসব ওষুধ দেদার বিক্রি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ফার্মেসিতে। সংকট ও অস্বাভাবিক চাহিদার কথা বললেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ব্যবস্থাপত্র চায় না ফার্মেসিগুলো। তবে বিক্রেতাদের দাবি, ব্যবস্থাপত্র চাওয়া হলে নানা অজুহাত দেখান ক্রেতারা। এদিকে স্পর্শকাতর এ ওষুধগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার প্রাণঘাতী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজারে ওরাডেক্সন, ডেক্সানেক্স, ডেকাসন কিংবা রোক্সাডেক্স এমন সব নামেই প্রচলিত। করোনা চিকিৎসায় এ ওষুধ কার্যকর এমন খবরের পরই এর চাহিদা বেড়ে গেছে। কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় আলোচনায় আসা অ্যান্টি প্যারাসাইট আইভারমেকটিন, এইডস চিকিৎসার ফেভিপিরাভির, ইবোলা নিরাময়ের রেমডেসিভির-এর চাহিদাও রয়েছে সমানভাবে।
সামান্য জ্বর-সর্দি-কাশি ছিল ৫০ বছর বয়সী এক রোগীর। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়েছিলেন তিনি। তবে রিপোর্ট আসার আগেই খাওয়া শুরু করেছিলেন অ্যান্টিবায়োটিক। পরে তিন দিন পর তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। একটি অনলাইন গণমাধ্যমের এক সাংবাদিকের জ্বর-সর্দি-কাশিসহ করোনার সব উপসর্গই ছিল।
এমনকি খাবারের স্বাদও পাচ্ছিলেন না তিনি। শুধু তিনিই নন, তার স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী মেয়েরও একই রকম উপসর্গ ছিল। কিন্তু তারা কেউই করোনা পরীক্ষা করেননি। ফোনে পরিচিত চিকিৎসকদের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করেছেন তারা। মাহমুদা নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর নমুনা টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ। যদিও তার কোনো উপসর্গ ছিল না। পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা তাকে ওরাডেক্সন দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম সুমন জানান, মানুষ এ ওষুধ যত্রতত্র ব্যবহার করায় এর রিঅ্যাকশন ভয়াবহ হতে পারে। ডেক্সামেথাসন করোনা চিকিৎসার কোনো ওষুধ নয়। এটা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না নিলে ভয়ঙ্কর হতে পারে। এটা কোনো সহজ ওষুধ নয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, ডায়াবেটিস বা গ্যাস্ট্রিক রোগীদের ক্ষেত্রে এ ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় পেটে ছিদ্র বা ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। যা রোগীর মৃত্যু ঘটাতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। শুধু ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ দূর করতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হয়। তবে তা নিয়ম মেনেই খাওয়া উচিত।
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলাইন রাসেল বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়া মারে, ভাইরাসকে নয়। তাই সাধারণভাবে কোভিডের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কোনো যুক্তি নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, কোভিড-১৯ এর কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অধিক ব্যবহারের কারণে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতার হারও বাড়বে। ফলে মহামারী ও এরপরও মৃত্যু হার বেড়ে যাবে। ডব্লিউএইচও বলছে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের হুমকি মোকাবিলায় মাত্র কিছুসংখ্যক কোভিড-১৯ রোগীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন। সংস্থাটি চিকিৎসকদের জন্য ইস্যু করা দিক-নির্দেশনায় যেসব লোকের কোভিড-১৯ এর মৃদু উপসর্গ কিংবা অল্প অসুস্থতা রয়েছে, তাদের অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়ার কথাই বলেছে।
অন্যদিকে স্পর্শকাতর এসব ওষুধ বেচাকেনায় কঠোর নজরদারির কথা জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। অধিদফতরের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড কোনো ওষুধই প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হয় না। এখন আরও কঠোর হয়ে গেছে।