শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

টেকসঁই বেড়িবাঁধ না থাকায় দূর্যোগ ঝূঁকিতে ইন্দুরকানীর নদী তীরবর্তি হাজারো মানুষ

টেকসঁই বেড়িবাঁধ না থাকায় দূর্যোগ ঝূঁকিতে ইন্দুরকানীর নদী তীরবর্তি হাজারো মানুষ

0 Shares

জে আই লাভলু :
দূর্যোগ ঝূঁকিতে রয়েছে উপকূলীয় এলাকা পিরোজপুরর ইন্দুরকানী উপজলার নদী তীরবর্তি ২০ সহ¯্রাধিক মানুষ। খাল এবং নদী বেষ্টিত এ উপকূলীয় জনপদের জনসাধারনের ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাস সহ নানা রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিত্য দিনের সঙ্গী। এভাবেই যুগ যুগ ধরে নানা রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ মাথায় নিয়ে এ জনপদের মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। জলবায়ূ পরির্তনের বিরূপ প্রভাব উপজেলাবাসীকে এক রকম আষ্টেপিষ্ঠে ধরেছে। দূর্যোগ মোকাবেলায় ঝূকিপূর্ণ এলাকা গুলোতে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রায় কেন্দ্রও নির্মান হয়নি এখনও। নেই টেকসঁই বেড়িবাঁধও। যার কারনে চরম ঝূঁকিতে রয়েছে এ উপজেলার বাসিন্দারা।

জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্নিঝড় সিডরের তান্ডবলীলা আর ভয়াবহতার কথা আজও স্মরন করিয়ে দেয় উপজেলাবাসীকে। সেদিন ৬৫ জনের প্রানহানী সহ অসংখ্য লোক আহত হয়ে ছিল। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে ছিল কয়েক হাজার মানুষ। এছাড়া ২০০৯ সালের ২৫মে আইলার জলোচ্ছাসে কচা ও বলেশ্বর নদের বেঁড়িবাঁধ সহ গোটা উপজেলার কাচা পাকা অসংখ্য রাস্তা ঘাট ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ দুটি দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপজেলাবাসী। ৯২.৫৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এ উপজেলায় মোট ৯৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। সিডর ও আইলার পরে এ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ গুলোর দীর্ঘ বছর পর কিছু অংশে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। উপজেলার টগড়া, খোলপটুয়া, পূর্ব চন্ডিপুর, পূর্ব চরবলেশ্বর, কালাইয়া ও সাইদখালী এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোর বেড়িবাঁধ গত এক থেকে দেড় বছর আগে নির্মান করা হলেও অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে তা কচা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।


বিভিন্ন সময়ে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্মচাপ এর সাথে টানা বর্ষণ আর আমাবষ্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে নদী তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় উপজেলার বিস্তৃর্ণ জনপদ। বছর না ঘুরতেই বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নদী তীরবর্তি এলাকার এসব বাসিন্দাদের।
আর বেঁড়িবাধ না থাকায় স্বাভাবিক জোয়ারেই নদ নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হয়ে যায় এর নিম্নাঞ্চল। এর কারনে ফসলহানী সহ সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হতে হয় উপজেলাবাসীকে। তাছাড়া প্রতি বর্ষা মৌসুমে কচা ও বলেশ্বর নদ রুদ্রমূর্তি ধারণ করায় নদী তীরবর্তি এলাকায় বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার মানুষকে চরম আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। তবে এর মধ্যে সবচেয় বেশি দূর্যোগ ঝুঁকিতে আছে টগড়া, খোলপটুয়া, পূর্ব চন্ডিপুর, পূর্ব চরবলেশ্বর, কালাইয়া ও সাইদখালী চাড়াখালী গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত শত শত পরিবার। পাশাপাশি সাইদখালির মাঝের চর, পাড়েরহাট আবাসন ও কলারন জাপানি ব্যারাকে বসবাসরত বাসিন্দারাও থাকেন আতংকে। নদীর মাঝে গড়ে ওঠা সাইদখালী চরের চারদিকে কোন বেঁড়িবাধ না থাকায় স্বাভাবিক জোয়ারে মাঝারী জলোচ্ছাসে এর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে এ সময়টাতে চরম দূর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয় চরের বাসিন্দাদের।
যুগ যুগ ধরে কচা ও বলেশ্বর নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শতশত একর ফসলি জমি এবং বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তি বিভিন্ন রাস্তাঘাট, হাটবাজার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পতিত হওয়ায় শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। দিনদিন ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ উপজেলার ভৌগলিক অবস্থানও ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। এ দুটি নদীর রাক্ষুসে থাবায় পূর্ব পুরুষদের ভিটেমাটি হারানো অসহায় মানুষ গুলো কোন রকম মাথা গোজার ঠাই হিসেবে যে যার মত করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকে কোন উপয়ান্তর না পেয়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা শহরে পাড়ি জমিয়েছে।
তাই প্রকৃতির সংগে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এ উপজেলাবাসীর প্রানের দাবী নদী তীরবর্তি ঝুকিপূর্ন এলাকা গুলোতে অচিরেই নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন এবং টেকসঁই বাঁধ নির্মান করে ভুখন্ডকে রক্ষা করা।

টগড়া গ্রামের কচা নদীর পাড়ে বসবাসরত জেলে আ: হক, আনোয়ার হোসেন ফরাজী ও আ: খালেক জানান, নদীর তুফানের শব্দে আমাদের রাতে ঘুম হয়না। বেঁড়িবাধ না থাকায় আমাদেরকে সবসময় আতংকের মধ্য দিন কাটাতে হয়। কখন জানি বড় দুর্যোগ এসে আমাদের সবকিছু ভাসিয় নিয়ে যায়।

উপজেলা যুবলীগ নেতা ও টগড়া গ্রামের বাসিন্দা শাওন তালুকদার জানান, বছর দেড়েক আগে এখানে বেড়িবাঁধ নির্মান করা হলেও অতিরিক্ত পানির চাপে তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখানকার নদী তীরবর্তি প্রায় সাড়ে তিন’শ পরিবার সীমহীন দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান, বিভিন্ন দূর্যোগে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া টেকসঁই বাঁধ নির্মানের ব্যাপারে পানি সম্পদ প্রতি মন্ত্রীকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমান জানান, দূর্যোগ মোকাবেলায় এ উপজেলাবাসীর জন্য টেকঁসই বাঁধ নির্মান অত্যান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। উপজেলাবাসীর দাবি, নদী তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অচিরেই নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন এবং টেকসঁই বাঁধ নির্মান করা।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ইন্দুরকানীতে ঘূর্ণিঝড় আম্পান সহ বিভিন্ন সময়ে জোয়ারের পানির চাপে খোলপটুয়া, কালাইয়া, সাউদখালী বাজার, পূর্ব চরবলেশ্বর, পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের বাঁধের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অধিক ঝূঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে শুধু মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মান করলে তা টিকবেনা। এসব স্থানে জিও ব্যাগ বা বøক দেয়া হলে হয়ত ভাঙ্গনের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে বাঁধ গুলো। ভেঙে যাওয়া এসব বাঁধ সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে বাঁধ গুলো পূন:নির্মান করা হবে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানান।

 

 





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap