শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ৭৩ বছরের আওয়ামী লীগ

ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ৭৩ বছরের আওয়ামী লীগ

0 Shares

ইন্দুরকানী বার্তা:
এই ভুখণ্ডের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম। এবছর প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পূর্ণ করলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল এটি। গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিয্য ধারণকারী আওয়ামী লীগ নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎড়াই ও সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে উপনীত হয়েছে। দীর্ঘ ৭২ বছরের পথ পেরিয়ে ৭৩ বছরে পা দিল দলটি।

পশ্চাৎপদ ও ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানে পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার কেএন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে দলটির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন দল গঠন করেন।

সাম্প্রদায়িকতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ পূর্ব পাকিস্তানে (পূর্ব বাংলা) অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চিন্তার প্রসার ঘটতে থাকে। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলটি প্রতিষ্ঠার প্রায় চার বছর পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ নামে বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রমের ব্রত নিয়ে এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পান এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ওপর ভিত্তি করে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসর হতে থাকে। এই অসাম্প্রদায়িক নীতিই হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক শেখ মুজিব।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলে রূপান্তরিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের শাসন-নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।

’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে দলটি অগ্রসর হয়। ’৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, এর পর ১১ দফার ভিত্তিতে ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ সময় দেশে একের পর এক আসা সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ঐহিহ্যবাহী এই দলটি।

এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অনেক চড়াই-উৎড়াই এবং ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে আগসর হতে হয়েছে। কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো দমন-পীড়ন, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বের এই শূন্যতা থেকেই দলের মধ্যে একাধিক ভাঙন, গ্রুপিং ও বহু ধারায় বিভক্তি দেখা দেয়। দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবব্ধ হয়। গত ৪ দশক ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চার বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে ৭২ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে, আন্দোলন-সংগ্রামে। ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা বেশি দিন টেকেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর এবং বর্তমানে টানা সাড়ে ১২ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, বাইরে ও ভেতর থেকে মতাদর্শগত অবস্থানে অনড় থাকার সংগ্রামও চালিয়ে যেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap