শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন

পিরোজপুরের দর্জির ছেলে পিকে হালদার যেভাবে হলেন অঢেল সম্পদ আর হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক…

পিরোজপুরের দর্জির ছেলে পিকে হালদার যেভাবে হলেন অঢেল সম্পদ আর হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক…

0 Shares

জে আই লাভলু:
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামের অজপাড়াগাঁয়ের সামান্য একজন দর্জির ছেলে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার। দরিদ্র পরিবারের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া প্রশান্ত কুমার এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চাঞ্চল্যকর হাজার কোটি টাকা লোপাট মামলার মূল অভিযুক্ত ও পলাতক আসামি তিনি। অঢেল সম্পদ, গাড়ী,বাড়ি আর ব্যাংক ভর্তি হাজার কোটি টাকা কোথা থেকে এবং কিভাবে এল এসব তার। এমন প্রশ্নে পিকে হালদারের নিজ জেলা পিরোজপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃস্টি হয়েছে। তার নিজ এলাকার সব মানুষ বিষয়টি নিয়ে হতবাক প্রশান্ত কুমার হালদারের পৈতৃক ভিটায় পড়ে আছে একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘর। জরাজীর্ণ এ ঘরটি দেখে কারোরিই বোঝার উপায় নেই যে অবৈধ ভাবে অর্জিত তিনি কত হাজার কোটি টাকার মালিক! বাড়ির এ অবস্থা দেখে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মিরা জানান, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করলেও তার মাঝে দেশ প্রেমের ছোঁয়া কিংবা মাতৃভুমির প্রতি কোন টান নেই।

এদিকে শুধু পিরোজপুরেই নয়, বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আতœসাৎ করে পাশর্^বর্তি দেশ ভারত সহ কানাডা ও সিঙ্গপুরে পাচার করায় তাকে ঘিরে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে চলছে এখন নানান আলোচনা। হাজার কোটি টাকা লোপাট মামলার পলাতক এ আসামি গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের অশোক নগর এলাকা থেকে ভারতের অর্থসংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থা ইডি’র জালে ধরা পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে খোদ পশ্চিম বঙ্গেও ব্যাপক হৈচৈ পড়ে গেছে। এত বিপুল পরিমান অর্থ দেশ থেকে কিভাবে বিদেশের মাটিতে পাচার হল এবং কারাইবা এর সাথে জড়িত তা খুঁজতে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের আইন শৃংক্ষলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা গুলো। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপতার হওয়ার পর সেখানে তাকে প্রথমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এত বড় দূর্নীতির খোঁজ জানতে চলছে তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। পিকে হালদারের গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকেও চলছে জোর তৎপরতা।

কে এই পি কে হালদার:
পিকে হালদারের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপরে। তার বাবা মৃত প্রণবেন্দু হালদার ছিলেন উপজেলার দিঘিরজান গ্রামের একজন সাধারণ দর্জি। আর মা লীলাবতি হালদার ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বামীর মৃত্যুর পর (২০ বছর আগে) লীলাবতী হালদার ফসলের ক্ষেত ও বসতবাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে যান।

পি কে হালদার দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন । তিনি ও তার ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার দুজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে দুজনই আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। পি কে হালদার পাশাপাশি চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সম্পন্ন করেন। পিকে হালদার বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষে বেক্সিমকো গ্রুপের জুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। ১৫-১৬ বছর আগে ভিন্ন ধর্মের এক নারীকে বিয়ে করার পর থেকে পি কে হালদার গ্রামছাড়া হন। পিকে ও তার ভাই ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাধী ছাত্র ছিলেন।
শিক্ষা জীবন শেষে পি কে হালদার যোগ দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেখানে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন।
তাঁর এই অর্থ পাচারের কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর মা আরেক ছেলে প্রীতিশ হালদারের বাড়ি ভারতের অশোকনগরে চলে গেছেন। পি কে হালদারের আরেক ভাই প্রাণেশ হালদার কানাডায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

পিকে হালদারের যত দূর্নীতি:
পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুসহ সিন্ডিকেটের সহায়তায় কয়েকটি লিজিং কোম্পানি থেকে অন্তত ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরিয়ে পিকে হালদার দেশ থেকে সটকে পড়েন। আর এসব অর্থের বড় একটি অংশ কানাডা, ভারত ও সিঙ্গাপুর পাচার করেন তিনি।

সূত্রে আরো জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা সরানো হয়। এ ছাড়া এফএএস ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পিপলস লিজিং থেকে একই কায়দায় আরও প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকা ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে পিকে হালদার ও তার সিন্ডিকেট।
সব মিলিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২২০০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ২৫০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং থেকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে আত্মসাৎ ও পাচার করা হয়েছে।
এরপর গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ২০২১ সালের শুরুতেই বিদেশে পালিয়ে যান তিনি।
হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে ভারতের কলকাতায় ভুয়া পরিচয়ে বসবাস করছিলেন প্রশান্ত কুমার হালদার। গত শনিবার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর সাথে তার ভাই, স্ত্রীসহ পাঁচ সহযোগীও গ্রেপতার হন।

পিকে হালদারের দূর্ণীতির তথ্য অনুসন্ধানে আরো যাদের নাম উঠে এসেছে:
গ্রেপ্তারের পর বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাটকারী পি কে হালদারের কলকাতায় বিলাসী জীবন যাপনের তথ্য উঠে আসছে। তাঁর এই সিন্ডিকেটের একটি অংশ তাঁর মতোই সাধারণ পরিবার থেকে আসা। তাঁদের সবার বাড়ি পি কে হালদারের জন্মস্থান পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার তিন সহযোগী অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার মৃধা ও তাঁর মেয়ে অনিন্দিতাম মৃধার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায়।
পি কে হালদারের বাবা পিরোজপুরের একটি বাজারে দরজির কাজ করতেন। তাঁর সহযোগীরাও সাধারণ পরিবার থেকে এসে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় দামি ফ্ল্যাটসহ দেশে-বিদেশে তাঁদের সম্পত্তির খোঁজ মিলছে।

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বাকসি গ্রামের রাজেন্দ্রনাথ মৃধার (মৃত) ছেলে সুকুমার মৃধা ও তাঁর মেয়ে অনিন্দিতার পৈতৃক বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাকসি গ্রামে। সুকুমার মৃধার বাবা ছিলেন গ্রাম্য চৌকিদার।
পি কে হালদারের আয়কর উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত ছিলেন সুকুমার মৃধা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকে নিজ এলাকা নাজিরপুর, পিরোজপুর ও খুলনায় একজন দানশীল, শিক্ষানুরাগী, গণমাধ্যমের সেবক এমন নানা খ্যাতি ছড়াতে থাকে। পেশাগত জীবনে তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, খুলনার রূপসা কলেজের অধ্যক্ষসহ একাধিক চাকরি করেন এবং এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারান বলে জানা যায়। নিজ গ্রাম বাকসিতে রাজলক্ষ্মী ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে সরকারি খাসজমিতে মহাবিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মন্দির, দুস্থ ছাত্রীনিবাস, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া এলাকায় অনেক মসজিদ ও মাদরাসা তৈরি করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুভাষ চন্দ্র মন্ডল। পার্শ্ববর্তী বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামে ৫০ বিঘা জমিতে একটি হরিণের খামারও করেছিলেন তিনি।

অপরদিকে পি কে হালদারের সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ওরফে কেয়ার গ্রামের বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলা গ্রাামে। পিরোজপুর শহরের খুমুরিয়া এলাকায়ও তাঁদের একটি বাড়ি আছে। অবন্তিকার বাবা ছিলেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রভাষক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার বড়াল। অবন্তিকা বড়াল ও তাঁর দুই ছোট বোন খুমুরিয়া এলাকার বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে এখানকার লেখাপড়ার পাঠ চুুকিয়ে অবন্তিকা ঢাকায় গিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।
বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সাতমসজিদ রোডে দামি ফ্ল্যাট রয়েছে অবন্তিকার। কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ওই ফ্ল্যাটে তাঁর বিধবা মা অপর্ণা বড়াল ও অন্য দুই বোন সেখানে বসবাস করছেন। অবন্তিকা গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে তাঁর মা অপর্ণা বড়াল পিরোজপুরের বাড়িতে এসেছিলেন। দুই-তিন দিন থাকার পর ঢাকায় চলে যান। জানা গেছে, অপর্ণা বড়াল পিরোজপুরে এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি ঘর বরাদ্দ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন।

নিজ এলাকার বাইরে পিকে হালদারের আরো দুই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী:

পিকে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত নাহিদা রুনাই। তার বাড়ি চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায়। রুনাইয়ের বাবার নাম মফিজুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামের একটি সরকারি দপ্তরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন।
নাহিদা রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে চাকরি পান। চাকরির সুবাদে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় পিকে হালদারের সঙ্গে। ২০০৯ সাল থেকে রিলায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পিকে হালদার। ২০১২ সালের দিকে পিকের সঙ্গে পরিচয় রুনাইয়ের। পিকে হালদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এত বেশি হয়ে যায় যে, তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এসএমই লোন শাখার অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধান পিকে হালদারের বান্ধবী ‘বড় আপা’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। পদ পেয়ে হয়ে যান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
রুনাই ছাড়াও আরেকজন বান্ধবী আছে পিকে হালদারের। নাম সুভ্রা রানী ঘোষ। দুজনই গ্রেফতার হয়ে এখন কারাবন্দি। যদিও গ্রেফতার হওয়ার পর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তারা একে অপরকে প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই ও ওকায়ামা লিমিটেডের পরিচালক সুভ্রা রানী ঘোষ। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পিকে হালদারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। তারা দুজনই পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত। তারা জালজালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন।
পিকে হালদারের ৬ জন ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দ সংস্থা গুলো। এদেরকে নিয়ে তিনি অন্তত ৬০ বারের বেশি বিদেশ ভ্রমনে গিয়েছেন। এদের প্রত্যেকের পিছনে খরচ করেছেন তিনি শত শত কোটি টাকা।

হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী পিকে হালদারের বিষয়ে যা জানালেন স্বজনরা:
পি কে হালদারের মামা শশোধর ব্যাপারী বলেন, ২০০২- ২০০৩ সালের দিকে প্রশান্ত একবার বাড়িতে এসেছিল। বসতঘর আর ফসলের জমি বেচে দিয়ে ওই সময়ে তার মা ভারতে চলে যায়। সেই সময় তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়। বিদেশে প্রচুর সম্পদ গড়লেও গ্রামে কোনো সম্পদ নেই তার। তবে এত অর্থ লোপাটের আগেও নানা কারণে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনায় ছিলেন পি কে হালদার।

দিঘীরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রশান্ত শিক্ষক মনিন্দ্য মজুমদার বলেন, ওরা আমার ছাত্র ছিল। ছোটবেলা থেকেই দেখছি, ওরা তিন ভাইই তুখোড় মেধাবী ছিল। প্রশান্তের অর্থ লোপাটের ঘটনায় আমি হতভম্ব। ওকে যখন দেখতাম, তখন ভাবিনি ভবিষ্যতে ও এমন কাজ করবে।
পি কে হালদারের চাচাত ভাইয়ের ছেলে সিদ্ধার্থ হালদার বলেন, ১৫-১৬ বছর আগে তিনি এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেন বলে গ্রামে প্রচার রয়েছে। তার জীবনযাপন রহস্যজনক ছিল। ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করায় তিনি ধর্মত্যাগী হয়েছেন বলেও খবর ছড়িয়েছিল।
দীঘিরজান গ্রামের পি কে হালদারের প্রতিবেশী কলেজশিক্ষক অধ্যক্ষ দীপ্তেন মজুমদার জানান, প্রশান্ত হালদারকে মেধাবী ছাত্র বলে জানেন তাঁরা। এলাকায় তেমন একটা আসা-যাওয়া ছিল না। মানুষ জানত প্রকৌশলী হিসেবে অনেক বড় চাকরি করেন। ১৫-১৬ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছেন বলে গ্রামে খবর রটে। তাঁর জীবনযাপন রহস্যজনক ছিল। কুষ্টিয়ায় একটি জুট মিলসহ তাঁর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল বলে মানুষ জানে। অঙ্গন হালদার নামে নিজ গ্রামের এক ব্যক্তি ম্যানেজার হিসেবে পি কে হালদারের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করেন। দীঘিরজান গ্রামে মা লীলাবতীর নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন পি কে হালদার। সেটিরও তত্ত্বাবধায়ক অঙ্গন হালদার। বর্তমানে পি কে হালদারের গ্রামের বাড়িতে পুরোনো একটি টিনশেড ঘর আছে, সেখানে তাঁর চাচাতো ভাই দীপেন্দ্র নাথ হালদার পরিবার নিয়ে থাকেন।

দীঘিরজান গ্রামের দীপেন্দ্র নাথ হালদার, তাঁর ছেলে দ্বীপ হালদার ও মেয়ে স্মৃতি হালদারের সঙ্গে দেখা হয়। দীপেন্দ্র নাথ হাওলাদার বলেন, ভাঙা বাড়িটি দেখেশুনে রাখছেন। কিন্তু প্রশান্ত বা তাঁর ভাইরা কেউই তাঁদের খোঁজখবর রাখেন না। পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের খবর শোনার পর তাঁরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
স্কুলজীবনে তার সহপাঠী এমদাদুল হক মোল্লা বলেন, প্রশান্তকে ছোট বেলা মরু বলে ডাকতাম। ‘ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে পি কে হালদারের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি। এক সঙ্গে এসএসসি পাস করেছি।’ প্রশান্ত ক্লাসে সব সময় প্রথম হতো’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তার অন্য ২ ভাইও খুব মেধাবী ছিল।’ ছোটবেলা থেকে শান্ত স্বভাবের প্রশান্ত ওরফে ‘মরু’ রাষ্ট্রের এত বড় অংকের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত হবে, তা কখনও কল্পনা করিনি।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap