শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

শ্রদ্ধার তুলিতে আঁকি হৃদয়ের শব্দাবলী

শ্রদ্ধার তুলিতে আঁকি হৃদয়ের শব্দাবলী

0 Shares

শ্রদ্ধার তুলিতে আঁকি
হৃদয়ের শব্দাবলী

বিনয় বরণ হালদার

কতকিছু ভুলে যাই
চোখের চশমা, গায়ের শার্টের বোতাম, ডাক্তারী ব্যবস্থাপত্র।
চেনা পথ, গণিতের সূত্রাবলি, পকেটে রাখা কলম আরও কত কি!

তবুও ভোলা হয়না কিছু প্রিয় শিক্ষকের মুখ, ব্লাকবোর্ডের লেখাগুলি, কোমল – কঠোর শাসন
আাবার মন খারাপ দেখলেইপিঠের ওপরে হালকা স্নেহ আদর।
আহা! কি মধুময় দিন, দিনলিপি!
ভোলার কি আসলেই কোনো সুযোগ আছে!

প্রাথমিকের লুৎফর স্যার, ছত্তার স্যার
মাধ্যমিকের শিশির স্যার, হাতেম আলী স্যার
কলেজের শচিন স্যার, ভার্সিটির আজাদ স্যার
বেগম আক্তার কামাল, রফিকুল স্যার, নরেন বিশ্বাস স্যার, আরও কত নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে প্রিয় মুখ
কাকে রেখে কার কথা বলি!
পাঠশালার সেই যাদব পন্ডিত স্যার
যার চোখে একটা বাংলা বর্ণ ভুল আকারে লেখা হলে
রেগে আগুন হতেন।
কড়া কন্ঠে বলতেন, বাংলা বর্ণ হলো বায়ান্নের রক্তপুত্র
শ্রদ্ধা ও সম্মানের, এ বর্ণ লেখায় কি ভুল করা চলে!
তখন বুঝিনি, আজ বুঝি কত গাঢ় কথা!

লুৎফর স্যার, যোগ – বিয়োগে সামান্য ভুল হলে
সে কি অগ্নিমূর্তি!
বলতেন, ভুল অংকে জানিস কি কত জীবন বরবাদ গেছে!
প্রতিদিন বাল্যশিক্ষা থেকে একটি নীতিবাক্য পাঠ
বাস্তবে আবার সেই পাঠ প্রয়োগে আদায় করে নিতেন
ভুল হলে তিরস্কার, ঠিক হলে একটি চকলেট
আহা! হিরের চেয়েও দামি!
আজও পুরস্কারের স্বাদ ঠোঁটে লেগে আছে।

মনে পড়ে শচিন স্যারের কথা, গণিতে ৯০ পেয়েছিলাম
রুমে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে, সে কি বকা
মুহূর্তেই নতজানু হয়ে সে কি কাঁদো কাঁদো চেহারা
বললেন, তোকে ১০০ দেবো এই মনে করে খাতা দেখা
শুরু করেছিলাম, সেই তোকে কি না দিতে হলো ৯০
জানো, এই দশটা নম্বর দিতে পারিনি বলে কতটা কষ্ট পেয়েছি।
নম্বর হলো শিশুর খাবারের মতো, সন্তানের খাবার কি হাতে রাখার সুযোগ আছে !

হাতেম আলী স্যার
মুখে মুখে যিনি ইংরেজি শেখাতেন
আবু জাফর স্যার, ভার্সিটিকালে যিনি একটি মাস সীতানাথ বসাকের বাল্যশিক্ষা পড়িয়েছিলেন, হাতে ধরে ধরে শিখিয়েছিলেন সঠিক আকৃতিতে অ আা ক খ। সে কি লজ্জা! তারপরেও সেখানোর সে কি চেষ্টা কৌশল।

নরেন বিশ্বাস স্যার, যিনি ক্লাস নিতে না পারলে অসুস্থ
হয়ে পড়তেন, প্রেসার বেড়ে যেত
ক্লাস নিলে স্বাভাবিক
একবার ১০৫ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে ক্লাস নিতে গিয়ে
জ্ঞান হারিয়ে প্লাটফর্মে পড়ে গেলেন
সমগ্র শিক্ষকতা জীবনে যিনি একটি টাকাও বেতন নেননি, বলতেন, আমি শিক্ষক – পড়ানোটা আমার সেবা, সেবা কি ফেরি করতে আছে!
কি অদ্ভুত! কি বিনয়ী
স্যার, একদিন বললেন, তোরা আর কতটা পড়ো
এই ৫৫ বছর বয়সেও আমি রাত দুটো, তিনটে পর্যন্ত পড়ি, তোরা হলি সন্তান তুল্য, সন্তানকে কি ভুল শেখাতে আছে?

ভুলে যেতে পারি অনেক কিছু
কিন্তু এমন নিবেদিত শিক্ষক কথা
জোছনার মতো নরোম হৃদয় সুরভি
কিছুতেই কি ভুলে যেতে আছে!





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap