মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার অভিযোগে কলারন চন্ডিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর মাহামুদা আক্তার নামে এক জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় কলারন চন্ডিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঐ স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবে বসে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনটি উত্তরপত্র, গাইড ও খাতা সহ হাতেনাতে তাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটককৃত মাহামুদা আক্তারের বোন জামাই ঐ প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) ফোরকান হোসেন গাজীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় আটক হওয়া ঐ ল্যাব অপারেটরের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সচিব মিন্টু কুমার হালদার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে থানায় মামলা দায়ের করেন। মাহামুদা গত কয়েক মাস আগে কম্পিউটার ল্যাাব অপারেটর পদে ঐ প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করেছেন। আটক হওয়া মাহামুদার বড় বোন সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) শিউলী আক্তার এবং বোন জামাই স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকান হোসেন গাজীও একই প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষক।
জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা শুরু হয়। শুরু থেকেই ঐ পরীক্ষা কেন্দ্রে এধরনের অনিয়মের অভিযোগ পায় সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর পর পরীক্ষা কেন্দ্রের তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আহসান আহম্মেদ সন্দেহ বশত দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত কম্পিউটার ল্যাবের কক্ষের সামনে গেলে বাহির থেকে দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকা কক্ষের ভিতর মানুষের উপস্থিতি টের পান। এরপর কেন্দ্র সচিবকে ঐ কক্ষের তালা খুলে দেয়ার কথা বললে তালা খোলার পর কক্ষের ভিতরে কম্পিউটার ল্যাাব অপারেটর মাহামুদা আক্তারকে দেখতে পান। ঐ কক্ষের ভিতরে তিনি কি করছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিজ্ঞেস করলে তিনি ল্যাবে নিজের ব্যক্তিগত কাজের কথা জানান। পরে তার ব্যাগ তল্লাশি করলে আজকের বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষার উত্তর পত্র ও ঐ বিষয়ের একটি গাইড বই পাওয়া যায়। এরপর বিষয়টি ইউএনওকে জানালে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইন্দুরকানী থানার ওসিকে জানালে ঐ পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়ে মাহামুদা আক্তারকে উত্তরপত্র ও একটি গাইড বই সহ আটক করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ঐ প্রতিষ্ঠানটিতে অনেক বছর ধরে এ ধরনের অনিয়ম চলছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে সহজ উপায় পাশ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানটির ভোকেশনাল শাখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা একজন সহকারী শিক্ষকের সাথে মোটা অংকের চুক্তির বিনিময়ে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।
এদিকে, চলতি বছরে ঐ প্রতিষ্ঠানটিতে পরপর দুই ধাপে কম্পিউটার ল্যাাব অপারেটর সহ ৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। বোর্ড গঠন সহ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি ঐ স্কুলটির সব শিক্ষকরাও পর্যন্ত জানেন না। কোথায় বসে বোর্ড গঠন করে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তা অনেকেই জানেন না। এ অনিয়মের অভিযোগে এর আগে খোলপটুয়া গ্রামের নয়ন নামে এক চাকরি প্রত্যাশী কলারন চন্ডিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ ৭ জনকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করায় মামলাটি তুলে নেয়া হয়।
পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রক্সির বিষয়ে কেন্দ্র সচিব মিন্টু কুমার হালদার বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রক্সি দেয়ার সময় হাতে নাতে ধরা পড়ায় স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর মাহামুদা আক্তারের বিরুদ্ধে বিধি অনুয়ায়ী মামলা দায়ের হয়েছে।
আটকের বিষয়ে ইন্দুরকানী থানার ওসি মো: এনামুল হক বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হওয়া কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর মাহামুদা আক্তারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সচিব বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেসা খানম বলেন, ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার সময় মাহামুদা আক্তার নামে এক স্কুলের ল্যাব অপারেটর উত্তরপত্র সহ হাতেনাতে আটক হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পরে তিনি তার দোষ শিকার করেছেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।