রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৭:১৮ অপরাহ্ন
ইন্দুরকানী বার্তা:
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় পাঁচ শতাধিক মানুষকে নানা প্রলোভনে দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন সৌদিয়া বহুমুখী প্রকল্প নামের একটি প্রকল্পের কতিথ প্রকল্প পরিচালক এবাদুল ওরফে সাজ্জাদ শেখ। সাজ্জাদ শেখ ও তার সহযোগিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার চরহোগলাবুনিয়া গ্রামে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ভূক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা বলেন, কতিথ ওই এনজিওটির নাম ‘চর হোগলাবুনিয়া শেখ ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশন ‘সৌদিয়া বহুমুখী প্রকল্প’। পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার কলারন গ্রামের ফজলুর রহমান শেখের ছেলে সাজ্জাদ ওই এনজিওটির পরিচালক পরিচয় দিয়ে দু’বছর পূর্বে মোরেলগঞ্জের চর হোগলাবুনিয়া গ্রামে কিছু জমি কিনে স্থায়ী বাসিন্দা হন। এর পরে তিনি সেখানে বিভিন্ন লোকের জমি লিজ নিয়ে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রকল্পের আওতায় একটি ক্লিনিক, ১ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক দুটি মাদরাসা, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, হেফজখানা, গরু-ছাগলের খামার, হাঁস-মুরগীর খামার, মৎস্য চাষ ও ধান চালের প্রকল্প চালু করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিয়ে প্রথমে এলাকার শতাধিক নারী পুরুষের নিকট থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ছাড়াও মসজিদ, গৃহ নির্মাণ, লোন দেয়া ও বিদেশে লোক পাঠানো, প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তিভিত্তিক জমির ভাড়া না দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়দের কাছ থেকে। রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি ভাটা থেকে কয়েক লাখ টাকার ইট ও বালু বাকিতে নিয়েছেন। এলাকাবাসির কাছে আস্থাভাজন হবার লক্ষে এই ‘সাজ্জাদ শেখ’ ওই গ্রামের একটি বেহাল সড়কে উন্নয়নমূলক কাজের উদ্ধোধন করতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন সময়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ব্যানারগুলোতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা, স্থানীয় এমপি ও শেখ পরিবারের লোকদের ছবি ব্যবহার করেন। সুচতুর এই প্রতারক সাজ্জাদ এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে মুহা.বাহা আল-দিন(সৌদি নাগরিক) বলে প্রচার করেছেন। নিজেকে দেখিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে। প্রকল্পগুলোর আওতায় ৬টি পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। প্রতারক সাজ্জাদের এসব ব্যবস্থাপনা দেখে স্থানীয়রা চাকুরি, বিদেশ যাওয়া, লোন পাওয়া ও চাকুরির আশায় গত দুই বছরে মোরেলগঞ্জের হোগলাবুনিয়া ও পার্শ্ববর্তী ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া, পত্তাশী, ঘোষেরহাট, পশ্চিম বালিপাড়া ৮ গ্রামের প্রায় ৫০০টি পরিবারের সদস্যরা ৩০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত সাজ্জাদ ও তার প্রতিনিধিদের হাতে দিয়েছেন। সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পাওয়া লোকজন বেতনের জন্য চাপ দিলে সে দুই মাস ধরে গা ঢাকা দিয়েছে। ভূক্তভোগীরা প্রতারক সাজ্জাদ ও তার সহযোগিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে শনিবার বিকেলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
এসময় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া, ফাতেমা বেগম, জয়নাল অবেদিন শেখ, শিক্ষক আব্দুল বারি, আলমঙ্গীর শেখ, ফোরকান শিকদার প্রমুখ।
এসময় শত শত ভূক্তভোগী নারি পুরুষেরা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মোরেলগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। অনতি বিলম্বে প্রতারক সাজ্জাদ শেখকে গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান বলেন, সৌদিয়া প্রকল্পের পরিচালকের বিরুদ্ধে ১৯ জন ভূক্তভোগী তার দফতরের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তকে এলাকায় না পাওয়ার কারনে বিষয়টি নিয়ে কিছু করা যায়নি থানা অফিসার ইনচার্জ সাইদুর রহমান বলেন, চরহোগলাবুনিয়া গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে ঘর দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার বিষয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভূক্তভোগীদের কথা শুনেছেন। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এবাদুল ওরফে সাজ্জাদ শেখ মুঠোফোনে জানান আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে এলাকা থেকে চলে আসছি। কাউকে চাকুরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেইনি। একটি চক্র আমার নাম করে টাকা নিয়েছে। কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমার কাছে টাকা পাবে মাত্র।