রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ পুলিশের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আট লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দুই ভাইকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে করা হয়।
বুধবার চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে মামলাটি করেন নিহত ব্যক্তিদের বোন জিনাত সুলতানা।
অপর আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইফতেখারুল ইসলাম, কনস্টেবল মাজহারুল ইসলাম, দীন ইসলাম ও আমজাদ হোসেন। এ ছাড়া টেকনাফ ও চন্দনাইশ থানার অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ থেকে ছয়জন পুলিশ সদস্যকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
বাদীর আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য আনোয়ারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৩ ও ১৫ জুলাই তাঁর প্রবাসী ও পেয়ারাচাষি দুই ভাই আমানুল হক ও আজাদুল হককে চন্দনাইশ থানা-পুলিশের সহায়তায় টেকনাফের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ ধরে নিয়ে যান। এরপর প্রদীপ ফোনে তাঁদের পরিবারের কাছে আট লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় ক্রসফায়ার দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। তাঁদের নামে কোনো থানায় একটি মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) ছিল না। যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনো কোনো অভিযোগ ছিল না। করোনা সংকটে নিরুপায় হয়ে দেশে ফেরেন বাহরাইনপ্রবাসী ছোট ভাই আজাদ। দেশে ফেরার ২ মাস ১৪ দিনের মাথায় গত ১৩ জুলাই এক বন্ধুর ফোন পেয়ে চন্দনাইশের কাঞ্চননগর ইউনিয়নের নিজ ঘর থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি তিনি। টানা দুই দিনেও আজাদের কোনো খোঁজ না পেয়ে থানায় জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ছোট ভাই নিখোঁজ হওয়ার ঠিক দুদিন পর ১৫ জুলাই চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের সামনের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে আজাদের বড় ভাই ফারুককে আটক করে নিয়ে যায় চন্দনাইশ থানা-পুলিশ। চন্দনাইশ থানার ওসি কেশব চক্রবর্তীর কক্ষে তাঁকে নিয়ে রাখায় হয়। এ সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজও আদালতে জমা দেওয়া হয়।
ওই অভিযোগ ওঠার পর সপ্তাহখানেক আগে কেশবকে চন্দনাইশ থানার ওসি থেকে সরিয়ে নেন জেলা পুলিশ সুপার। বর্তমানে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত। গত ১৬ জুলাই আমানুল হক ও আজাদুল হককে টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দাবি করে টেকনাফ থানা-পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তাঁরা দুজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা নিতে চন্দনাইশ থেকে তাঁরা টেকনাফে আসেন।
মামলার বাদী জিনাত সুলতানা বলেন, চন্দনাইশ ও টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসির পরস্পর যোগসাজশে তাঁর দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তাহলে মামলায় কেন কেশব চক্রবর্তীকে আসামি করা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উঠে আসুক।
গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ওই ঘটনায় তাঁর বোনের করা মামলায় ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এরপর প্রদীপের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের নামে মানুষ হত্যার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়। জিনাত সুলতানার মামলাটির মধ্য দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আদালতে জমা হলো।