বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুরের ঐতিহ্যবাহী ভান্ডারিয়া উপজেলার ১নং ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের নুরজাহান হাবীব বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে শনিবার দুপুরে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল ইসলাম খান নগদ ১০হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করেছেন এবং ভবিষ্যতে তার লেখা পড়ার সকল দ্বায়িত্বও গ্রহন করেছেন।
আইরিন ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের জেলেপাড়া খ্যাত গুচ্ছ গ্রামের জেলে আব্দুল কালাম ভূইয়াঁ ও গৃহিণী আমেনা খাতুনের দ্বিতিয় সন্তান।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, জেলে কামাল ভূইয়াঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে সহ চার সন্তান। বড় মেয়ে শারমিন আক্তার ভান্ডারিয়া মজিদা বেগম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বি এ অনার্স বিভাগে,মেঝো মেয়ে আইরিন এসএসসিতে বাণিজ্য বিভখাগে এ+ পেয়েছে ,সেজো মেয়ে নাসরিন নুরজাহান হাবীব বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়ন রত এবং ছোট ভাই সংসারের হাল ধরতে অটো ড্রাইভারের প্রশিক্ষন গ্রহন করছে। আইরিন পিরোজপুর জেলা পুলিশ টিমের খেলোয়ার। শুধু ফুটবল,কাবাডি ই নয় বাই সাইকেল চালানো,সাঁতার কাটা,ঘুড়ি ওড়ানো এসকল ক্রিড়ায় পারদর্শী । এবং স্কুলের যে অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে। কেহ বিপদে পড়লে আইরিন আগ পাছ না ভেবে বিপদ কবলিত ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসে। এমনকি মায়ের সাথে সংসারের খুটি নাটি কাজেও মাকে সাহাজ্য করে।
সম্প্রতি আইরিন জেলা পুলিশের একটি ক্রিড়ায় (কাবাডি) অংশ নিয়েছিল। ওটাই তার ভাগ্য বদলের সুযোগ হল। ওই অনুষ্ঠান উপভোগ কালে খেলার মহিলা কাবাডি দলের কোচ ভান্ডারিয়া বিহারী লাল মিত্র পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্রিড়া শিক্ষক এবং স্কাউট লিডার মো.শফিকুল ইসলাম আযাদের কাছে আইরিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পুলিশ সুপারকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানান, মেয়েটির বোধহয় ঝড়ে পড়বে ! কারন জানতে চাইলে কোচ জানান, ওর বাবা মাছ শিকার করে (জেলে) ঝরবৃষ্টি উপেক্ষা করে – রাত দিন পরিশ্রম করে স্ত্রী, চার সন্তানের ভরন পোষণ সহ লেখা পড়া চালাতে পারছে না ! আইরিন বাবার সাথে সংসারের হাল ধরতে এবছরই গার্মেন্টস এ চাকুরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুনে পিরোজপুর পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে গতকাল শনিবার খেলার পুরস্কার এবং গার্মেন্টেসএ না গিয়ে পড়া শোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে ১০০হাজার নগদ অর্থ প্রদান করেন। এবং আইরিনের ভবিষ্যত ইচ্ছে শেষ পর্যন্ত সে লেখা পড়া করে একজন সফল নারী ক্রিকেটার হয়ে ভান্ডারিয়া,পিরোজপুর তথা দেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেড কোয়ার্টার কাজী শাহ নেওয়াজহ এবং কোচ মো.শফিকুল ইসলাম আযাদ।
এদিকে আইরিনের এ সুখবরে দরিদ্র জেলে বাবা আব্দুল কালাম সহ পরিবারে সদস্যগণ আনন্দে উচ্ছসিত বলে জানান,আইরিনের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী সঞ্জীব কুমার মজুমদার। প্রধান শিক্ষক আরো জানান মেয়েটি যথেষ্ট মেধাবী। সে যথেষ্ট অধ্যাবষায়ী,ধৈর্যশীল এবং কোন বিষয়ে প্রাইভেট পড়া ছাড়াই নিজের দক্ষতায় আমাদের স্কুল থেকে বানিজ্য বিভাগ থেকে এসএসসিতে এ+ পেয়েছে। তার ইচ্ছ এবং স্বপ্ন পুরনের জন্য সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা করছি।