বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
জে আই লাভলু :
বাগানে ঢুকতেই যেন চারিদিকে সবুজের হাতছানি। সবুজ পাতায় বৃস্টির ফোঁটা কখনো কখনো বাতাসে দোল খাচ্ছে তরতাজা গাছগুলো। সবুজ বর্নের পাতা আর মাল্টার ভারে নুয়ে পড়েছে ডালগুলো। স্বচক্ষে এ দৃশ্য দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। সঠিক ভাবে পরিচর্যা আর জৈবসার ব্যবহারের ফলে গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠেছে মায়াবী ঢংয়ে। পতিত জমিতে বাগান করার পর জৈব সার ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত মিস্টি আর রসালো মাল্টার বাম্পার ফলন ঘটিয়ে এলাকায় সবার নজর কেড়েছেন তারা। এ কথা গুলো পিরোজপুরের ইন্দরকানী উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার গাজী আব্দুল জব্বার, বেকার যুবক রাসেল গাজী, শাহিন গাজী এবং সাংবাদিক শাহাদাত বাবুর যৌথ প্রচেস্টায় দক্ষিন ইন্দুরকানী গ্রামে করা মাল্টা বাগানকে নিয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের পিছনে ৫০ শতাংশ পতিত জমিতে চাচা ভাতিজা মিলে ২০১৭ সালে শুরু করেন মাল্টার চাষ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদর্শণীর জন্য প্রথমে তাদেরকে ১০০টি বারি-১ জাতের চারা দেয়া হয়। এরপর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আরো ১৫০টি বারি-১ জাতের চারা তারা সংগ্রহ করেন। বাগান তৈরী করতে প্রথমে লাখ টাকার মত খরচ হয় তাদের। তবে এখন প্রতি বছর বাগান রক্ষনাবেক্ষন সহ আনুসঙ্গিক ২০ হাজার টাকার মত খরচ পড়ে তাদের। এ বাগানে মাল্টার পাশাপাশি রয়েছে সাথি ফসল । সাথি ফসল হিসেবে পেপে, লাউ, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা ও করল্লার চাষ করেছেন তারা। এছাড়া এর সাথে করা হয়েছে বিভিন্ন্ প্রজাতির মাছের চাষ। মাল্টার প্রদর্শণী বাগান এবং টিভিতে কৃষি ভিত্তিক অনুষ্ঠানে মাল্টার উপর প্রামান্য চিত্র দেখে বাগান তৈরীর ব্যাপারে আগ্রহ জমে তাদের। এরপর উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা বাগান করেন। চারা রোপণের মাত্র দুবছরের মাথায়ই গাছে ফলন ধরে। প্রথম বছর তারা প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এবছর এখন পর্যন্ত ১১ মণ মাল্টা বিক্রি করতে পেরেছেন। এ বছর ফলন কয়েক গুন বেশি হওয়ায় দেড় লাখ টাকার মত আয় হবে বলে জানান বাগান মালিক।
প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মাল্টার বাগান দেখতে আসেন বেকার যুবকরা। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাল্টা বারি-১ উচ্চ ফলনশীল সুস্বাধু ফল। মাল্টা গাছে সাধারনত ফেব্রুয়ারী মাসে ফল ধরে। এটি পরিপক্ব হয়ে সেপ্টম্বরের দিকে। ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল পাকতে সময় লাগে প্রায় মাস ছয়েকের মত। ফলন ভাল হলে প্রতিটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ২০০-৩০০টির মত মাল্টা পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন- সি সমৃদ্ধ একটি ফল। স্থানীয় কৃষকরা এখন মৌসুমী ফল পেয়ারা, আম, কাঁঠাল, লিচু, বড়াইর পাশাপাশি দেশী জাতের মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন এবং এতে অভাবনীয় সাফল্যও অর্জণ করছেন।
বাগান মালিক অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার গাজী আব্দুল জব্বার প্রতিবেদককে জানান, দেশি জাতের এ মাল্টা বেশ বড় এবং খেতে রসালো ও মিস্টি। প্রতি বছর ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাসের মধ্যে ফল বিক্রি করা হয়। ক্রেতা-দোকানির কাছে আমদানি করা হলদে রঙের চেয়ে এখানকার সবুজ মাল্টার কদর বেশি। আগামীতে এর ফলন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদি তারা।
মাল্টা চাষি সাংবাদিক বাবু জানান, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের থেকে মাল্টা অল্প খরচ ও কম খাটুনিতে বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে। মাল্টা বাগান থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পাইকারি ৯০-১০০ টাকা দরে কিনে বাজারে তা ১২০ টাকায় কেজিতে বিক্রি করছে। আগামীতে আরো বেশি জায়গায় মাল্টার চারা রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। মাল্টার বাগান করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন বেকার এ যুবক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়রা সিদ্দিকা জানান, এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষের জন্য যথেষ্ঠ উপযোগী। ফলন ভাল হওয়ায় এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছর মাল্টার বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সখের বশে অধিকাংশ বাড়িতে মাল্টার চারা লাগালেও এখন বানিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টার বাগান করে লাভবান হচ্ছেন অনেকে। সম্ভাবনাময় মাল্টা চাষ আমাদের দেশে সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে। এ ফলটি চাষ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে তিনি প্রতিবেদককে জানান।