শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন

নভেম্বর মাস আইলেই কেন জানি কইজ্জায় পাড় মারে !

নভেম্বর মাস আইলেই কেন জানি কইজ্জায় পাড় মারে !

0 Shares

জে আই লাভলু:
সুপার সাইক্লোন সিডরের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে আজও আঁতকে ওঠেন উপকূলীয় জনপদ পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর অসংখ্য মানুষ। প্রকৃতি যে মানুষের উপর এতটা নিষ্ঠুর আচরন করতে পারে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ’’সিডর’’ তার উৎকৃষ্ট উদাহরন। আজকের এই দিনে দেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের ১২ টি জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী এ ঝড়ে শুধু মানবকুলের অস্তিত্বই নয়, ধ্বংসযজ্ঞে পরিনত হয় গোটা উপকুলীয় এলাকার বিস্তীর্ন জনপথ। প্রকৃতির নিষ্ঠুর আঘাতে সেদিন অসংখ্য প্রানহানী সহ বহু স্থাপনা, রাস্তাঘাট,আবাসস্থল পশুপাখি, জীবজন্তু গাছপালা সবকিছুই মাটির সাথে মিশে যায়। ঐ একটি রাত তছনছ করে দেয় অনেকের সাজানো সংসার। সিডরের মরন ছোবলে ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় খাদিজা, লালভানুর মত অনেকের লালিত স্বপ্ন।
সন্ধা ৬ টার দিকে ঝড়ের আলামত শুরু হলেও রাত ১১ টার দিকে ইন্দুরকানীতে আঘাত হানে সিডর। এসময় ৮ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়ে যায় এলাকা। হাজার হাজার গাছপালা এবং সহসা¯্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়ে অনেক পরিবার। চারিদিকে নদী বেষ্টিত সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকা ইন্দুরকানীতে সেদিন সিডরের হিংস্র থাবায় নারী, পুরুষ, শিশুসহ ৬৮ জনের প্রানহানী ঘটে। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৩নং বালিপাড়া ইউনিয়নের মানুষ। শুধু ঐ এলাকায়ই নিহত হয় ৫৭ জন ।
সেদিনের দুঃশসহ সৃতি মনে করে গুমরে কেদে ওঠেন নদীর কিনারে বাস করা পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের জেলে ইব্রাহীম সেখ। বলেন তার তিন সন্তান হারানোর সেই বেদনা বিধুর কথা। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড় যখন প্রচন্ড বেগে শুরু হল তখন নদী থেকে বিদ্যুৎ বেগে পানি আসতে দেখে স্ত্রী জয়নব বিবি, এক বছরের ছেলে রাকিব,সাকিব (৪), নাইম(১১) কে নিয়ে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় যাবার জন্য ঘর থেকে বের হন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি এবং তার স্ত্রী বেচে গেলেও দুদিন পর ১ কিঃ মিঃ দুরে মালবাড়ি ব্রীজের কাছে ধানক্ষেতে তার ৩ সন্তানের লাশ পাওয়া যায়। ৪ বছরের শিশু কণ্যা চাদনিকে হারিয়ে এখনো মূর্ছা যান মা খাদিজা বেগম। সেদিন প্রিয় সন্তানকে হরানোর কথা বর্ননা করতে গিয়ে মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে অঝর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। প্রচন্ড বাতাস আর জলোচ্ছাসে যখন তার ঘর দুমড়ে মুচড়ে পড়ে তখন মেয়ে চাদনিকে নিয়ে নেমে পড়েন বাইরে। কিন্তু রাস্তায় উঠতেই তাদের দুজনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। খাদিজা বেগমকে একটি গরুর লেজ ধরা অবস্থায় ভোর রাতে বাড়ি থেকে ১ কিঃ মিঃ দুরে পানের বরজ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ধানক্ষেত থেকে ৬ দিন পর মেয়ে চাদনির লাশের সন্ধান মেলে। এতো গেল শিশু চাদনির কথা।

অপরদিকে,পূর্ব চরবলেশ্বর গ্রামের দিনমজুর মতিউরের স্ত্রী লালভানু তখন ৩ সন্তান নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন। প্রচন্ড জলোচ্ছাসে যখন ঘরে থাকার উপায় নেই তখন বাচার তাগিদে সন্তানদের নিয়ে পাশের একটি এনজিও অফিসে আশ্রায় নেয়ার জন্য রাস্তায় বের হতেই পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাদেরকে। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি ৩ দিন পর ৪ বছরের মেয়ে কুলছুম এবং লালভানু (৩০) তার দু বছরের সন্তান সাকিবকে বুকে জড়ানো অবস্থায় বাড়ি থেকে আধা কিঃ মিঃ দুরে ধানক্ষেতে তাদের লাশ পাওয়া যায়। বাড়িতে অবস্থান না করায় ভাগ্যক্রমে সেদিন বেচে গেলেও স্ত্রী এবং দু’ সন্তানকে হারিয়ে আজও নির্বাক মতিউর। এভাবেই মাঝের চরের গৃহবধু ময়না, কুলছুম, পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের ফয়সাল(৭), ১৪ দিন বয়সের হ্দয়ের মতো আরো অনেককে ঐদিন চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে।
সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া খাদিজা বেগম প্রতিবেদককে জানান, নভেম্বর মাস আইলেই কেন জানি কইজ্জায় পাড় মারে। সিডরের দু:শসহ স্মৃতি মনে পড়লে গা ভয়ে ধরধর কইররা কাপে।

বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, ২০০৭ সালের সিডরে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৩নং বালিপাড়া ইউনিয়নের মানুষ। শুধু এই এক ইউনিয়নেই সেদিন নিহত হয় ৫৭ জন মানুষ। গবাদিপশু, ঘরবাড়ি,গাছপালা, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয় সেদিনের বন্যায়। ঐ সময়ে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রবল জলো”ছাসে নদী তীরবর্তি অনেক নারী,পুরষ, শিশুকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এড. এম মতিউর রহমান বলেন, এ উপজেলার নদী তীরের অধিকাংশ স্থানের বেড়িবাঁধ বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে নদী তীরবর্তি এসব এলাকার জনসাধারন বর্তমানে বেশি দুর্যোগ ঝূঁকিতে রয়েছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে এখানে টেঁকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।’





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap