শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে তাদের ভালোবাসা

সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে তাদের ভালোবাসা

সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে তাদের ভালোবাসা

0 Shares

ইন্দুরকানী বার্তা ডেস্ক :
ভাগ্য কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না। জীবন চলে বহমান নদীর মত। ভাসতে ভাসতে মানুষ কোনো না কোনো গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আর এই গন্তব্য কারও জন্য হয় সুখের, আবার কারও জন্য দুঃখের। কারও কারও জীবনের গল্প সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। তেমনই এক দম্পতি রাসেল-সাথী।

জানা গেছে, রাসেলের পুরো নাম রাসেল আহম্মেদ (২৬)। কিশোর বয়স থেকে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় এবং পুরো শরীরে অসংখ্য কাটা দাগ থাকায় নাটোর শহরবাসীর কাছে কাটা রাসেল বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এমন কোনো অপরাধ নেই যে তিনি করতেন না। বছরের বেশিরভাগ সময় থাকতেন কারাগারে। ১৪টির মতো মামলা ছিল তার নামে। তবে সব কিছু ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন রাসেল। যার নেপথ্যে রয়েছে লাবণ্য সিদ্দিকা সাথী নামে এক তরুণীর অকৃত্রিম ভালোবাসা।

অপরাধ জগতের স্থায়ী বাসিন্দা কাটা রাসেলের সব কিছু জেনেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান সাথী। পরে তারা বিয়েও করেন। বছর না ঘুরতেই এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। এরই মধ্যে একটি মামলায় সাজা হয়ে জেলে যান রাসেল। স্বামী জেলে যাওয়ার সময় একটি টাকাও রেখে যাননি। সাহায্য করার মতোও কেউ নেই। কীভাবে আগামী দিনগুলো চলবে তা ভেবে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন সাথী।

প্রতিবেশী এক খালার পরামর্শে অসহায় শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে সাথী নাটোর শহরের ফুটপাথে ভাপা পিঠা এবং কালাই রুটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। পাশাপাশি কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে উচ্চ আদালত থেকে রাসেলকে জামিনে বের করে নিয়ে আসেন। একমাত্র সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে রাসেল শপথ করেন আর কখনও অপরাধমূলক কাজে জড়াবেন না।

সেই থেকে রাসেল-সাথী দম্পতি নিজ মহল্লা মীরপাড়া ছেড়ে শহরের চক বৈদ্যনাথ এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে কঠোর পরিশ্রম করে বছর তিনেকের মাথায় সংসারে স্বচ্ছলতা আনেন।

জেলার বিভিন্ন হাটে কাঠের আবাবপত্র বিক্রি করে ভালোই চলছিল রাসেল-সাথী দম্পতির জীবন । কিন্তু রাসেলের কারখানার দিকে নজর পরে শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার মৃত তসলিম উদ্দীনের ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী বুদু মিয়া ওরফে কুত্তা বুদু এবং নিরাপত্তাকর্মী আলমের ছেলে ন্যাড়া সোহেলের। তারা বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে রাসেলের কাছে চাঁদা এবং বাকিতে ফার্নিচার দাবি করে আসছিল।

রাসেল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২৭ মার্চ দুপুরে কুত্তা বুদু এবং ন্যাড়া সোহেলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে রাসেলকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ সময় রাসেলকে রক্ষা করতে সাথী এগিয়ে এলে তাকেও সন্ত্রাসীরা বেধড়ক মারধর ও শ্লীলতাহানি করে। পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় সাথী বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ সোমবার (২৯ মার্চ) কুত্তা বুদুকে গ্রেফতার করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইমন আলী নামে এক তরুণ জানান, রাসেল গত ৩/৪ বছর ধরে কারও সঙ্গে চলেন না। বাড়ি আর কারখানা ছাড়া তিনি কোথাও যান না। রাসেল এবং তার স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন করা হলেও তারা টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। যখন রাসেল ভালো পথে চলছে ঠিক সে সময় সন্ত্রাসীরা এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটানো ঘটাল।

রাসেল বলেন, সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে কথা দিয়েছি তাই নীরবে মার খাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। মানুষ আসলে আমাকে ভালো হতে দেবে না। আজকে আগের মতো কাটা রাসেল থাকলে এই চুনোপুঁটিরা টুঁ শব্দ করার সাহস পেত না। তারপরও আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পুলিশ মামলা নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রধান আসামি কুত্তা বুদুকে গ্রেফতার করেছে।

নাটোর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, অভিযোগ পেয়েই প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap