শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

আসল ঘটনা আড়াল করে ইন্দুরকানীতে ইউপি চেয়ারম্যান সহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মিদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

আসল ঘটনা আড়াল করে ইন্দুরকানীতে ইউপি চেয়ারম্যান সহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মিদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

0 Shares

ইন্দুরকানী বার্তা রিপোর্ট :
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর পত্তাশীতে কাঠ ব্যবসায়ী আল-আমিন কর্তৃক রাতের আধারে এক নারীর শ্লীলতাহানির চেস্টার ঘটনা আঁড়াল করে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন সহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মিদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় একটি স্বার্থনৈশী মহল আগামী ইউপি নির্বাচনকে টার্গেট করে ইউপি চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মিদের বিতর্কিত করতে এ ঘটনায় হয়রানি মুলক মামলা দায়ের এবং তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

১ এপ্রিল বিকালে পত্তাশী গ্রামে ঘটনার অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, গত (২৮ মার্চ) রবিবার রাত আনুমানিক ৯টা। আল আমিন নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী ঐদিন রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে পত্তাশী গ্রামের মুসা সেখের বাড়িতে যান। ঐদিন রাতে কাছাকাছি একটি স্থানে মাহফিল চলায় পুরুষ লোকজন বাড়িতে নেই ভেবে ঐ বাড়িতে ঢুকে বিবাহিত একটি মেয়েকে শ্লীলতাহানির চেস্টা চালাতে গেলে বাড়ির লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। এরপর ইন্দুরকানী থানা পুলিশ খবর পেয়ে আল আমীনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ঐ মেয়েটি বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আলামিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর সেখান থেকে তাকে পুলিশ প্রহরায় পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, কাঠ ব্যবসায়ী আল-আমিনকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাতে ২নং পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেন ও তার ছেলে সানী সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ইন্দুরকানী থানায় মামলা করেন আল আমিনের পিতা আলী আকবার। এ ঘটনায় পত্তাশী ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক মোঃ আঃ মজিদ ফকির ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আলাম ফকিরকে ঐদিন রাত ১১টার দিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তবে এ পুরো ঘটনাটি আড়াল করে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজনকে ফাঁসাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় আলামিনের নির্যাতনের ঘটনাটি। আর এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে ফেসবুক সহ গণমাধ্যম গুলোতে। শুরু হয় চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মিদের নামে অপপ্রচার। এ ঘটনাটি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় আ.লীগের নেতাকর্মিদের নামে মামলায় দেয়ায় নানা প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

শ্লীলতাহানির শিকার ঐ মেয়েটির মা শিল্পী বেগম জানান, আমার মেয়ে দরজা খুলতেই আলামিন তার মুখ চেপে ধরে। এরপর গায়ের ওড়না ধরে টান দিলে সে ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। এসময় সে চিৎকার শুরু করলে তার গলা চেপে ধরে আলামিন। চিৎকারের শব্দ পেয়ে তিনি ও তার ফুফাতো ভাই আহম্মদ ছুটে আসতেই আলামিন দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তাকে ধরে ফেলে আহম্মদ। ওখানে বসেই তাকেও উত্তম-মধ্যম দেওয়া শুরু করলে ঐ বাড়ি ও আশপাশের লোকজন টের পেয়ে সাথে সাথে বাড়ির উঠানে জড়ো হয়।
শ্লীলতাহানির শিকার ঐ মেয়েটির চাচা শাহ আলম শেখ জানান, ঘটনার দিন রাতে পত্তাশী বাজার সংলগ্ন স্থানীয় হাসানিয়া মাদ্রাসার মাহফিলে ছিলাম আমরা। বাড়িতে দুএক জন যুবক ছাড়া অন্যান্য পুরুষ লোকজন মাহফিলে ছিল। আমরা এ ঘটনার খবর পেয়ে সাথে সাথে বাড়িতে ছুটে আসি। এসে দেখি আশপাশের অনেক লোক জড়ো হয়েগেছে। রাত দশটার কিছু পরে স্থানীয় থানা পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের বাড়িতে আসে। এরপর বাড়িতে মহিলাদের কাছে ঘটনা শুনে আল-আমিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এখানে চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের ছেলে বা তার কোন লোকজনকে মারধর করতে আমরা দেখিনি বলে তিনি জানান।

সরেজমিনে ঐ বাড়িতে গেলে মেয়েটি ঐ দিনের ঘটনার বিবরণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার দুদিন আগে শুক্রবার আমি মোড়েলগঞ্জের দৈবজ্ঞকাটি শ্বশুর বাড়ি থেকে আমার বাবার বাড়ি পত্তাশী গ্রামে ফেরার পথে আলামিন আমার পিছু নেয় এবং পরে পথ আগলে দাঁড়ায় এবং আমার সাথে তার কিছু কথা আছে বলে তিনি জানায়। এ সময় তার কথাবার্তায় খারাপ কিছু উদ্দেশ্য মনে হলে আমি তাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি। এরপর আমার মায়ের সাথে কথা বলবেন বলে তিনি আমার কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার রেখে দেন। বাড়িতে পৌছে বিষয়টি আমার মাকে আমি খুলে বলি। এরপর বেশ কয়েকবার আমার নাম্বারে ফোন দিয়েছিলেন তিনি। আমি একবার ফোন রিসিভ করে তার পরিচয় শোনার পর পরে আর তার ফোন রিসিভ করিনি।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন রাতে আমার পড়নের ওড়না ও হাত ধরে টানা হেচরা করলে আমি চিৎকার দিলে এরপর সে আমার মুখ ও গলা চেপে ধরে। পরে শব্দ পেয়ে আমার মা ঘর থেকে বাইরে নামে। এরপর আমার এক ভাইও ছুটে আসলে আলামিন আমাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে। এরপর আমি উঠানেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ি।

মেয়েটির ফুফাতো ভাই আহম্মদ জানান, আমার বোনের ডাকচিৎকার শুনে আমি ওখানে ছুটে আসি। তখন আল-আমিন নামে ওই লোকটাকে দৌড়ে পালাতে দেখে আমি তাকে ধরে ফেলি। তখন তাকে উত্তম মধ্যম দেয় শুরু করলে আশাপাশের লোকজন এখানে আসে। আলামিন দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারে বিধায় স্থানীয় লোকজন তাকে ওখানে বেঁধে রাখে বলে তিনি জানান।
স্থানীয়রা জানান,মাহফিল স্থল থেকে আল আমিনের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা অন্যদিকে। পথঘাট বিহীন একটি নির্জন বাড়িতে রাতের আধারে ঢোকার উদ্দেশ্যটা কি ছিল তার। কুমতলব নিয়ে এই বাড়িতে ঢুকে ছিল সে এমনটাই জানালেন ওই বাড়ির এবং আশপাশের লোকজন। এঘটনার আরও কয়েকদিন আগে অপর একটি বাড়িতে ঢোকায় বাড়ির মহিলাদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায় সে।
তার বিরুদ্ধে ইন্দুরকানী থানায় ২০১৩ সালের নাশকতা মুলক কর্মকান্ডের ঘটনায় মামলা রয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তি মোড়েলগঞ্জ থানায়ও অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের মামলা রয়েছে বলে স্থানীয় যুবলীগের কয়েক নেতা জানান।
স্থানীয় ছোমেত হাওলাদার জানান, রাত দশটার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ইন্দুরকানী থেকে পত্যাশী বাজারে আসলে এ ধরনের একটি ঘটনার খবর তাকে আমি জানাই। সাথে সাথে তিনি থানায় ফোন করেন এবং বিষয়টি জানতে স্থানীয় চৌকিদারকে ওখানে যেতে বলেন।
স্থানীয় চৌকিদার রিয়াজ জানান, ঘটনার ঘন্টাখানেক পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিষয়টি ভালভাবে জানার জন্য আমি ওখানে যাই। আমি যেয়ে দেখি ঐ বাড়ির এবং আশপাশের লোকজন আলামিনকে ঘিরে রেখেছে। এরপরে চেয়ারম্যান ওখানে আসেন। তখন ওখানে পুলিশও ছিল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আল আমীন জানান, রোববার রাতে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় মাহফিল শুনে এলাকার এক যুবকের সাথে বাড়ি ফিরছেলেন। এ সময় একটি বাড়ির উপর থেকে যাওয়ার সময় পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর লোকজন আমাকে বেধে নির্যাতন করে।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আগামী ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে আমাকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখার জন্য এবং বিতর্কিত করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী একটি মহল আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। একের পর এক এলাকার বিভিন্ন ঘটনা টেনে এনে এর মধ্যে আমি ও আমার আমার পরিবারকে উদ্দেশ্য মুলক ভাবে জড়ানো হচ্ছে।
আলামিন ঐদিন রাতে কুমতলব নিয়ে মুসা শেখের বাড়িতে যায়। ঐ বাড়ির একটি বিবাহিত মেয়ের শ্লীলতাহানির চেস্টা চালায় সে। পরে বাড়ির লোকজন তাকে ধরে বেধে রাখে। আমি পরে ঐ ঘটনার খবর লোকমুখে শুনে তাৎক্ষনিক বিষয়টি থানায় জানাই এবং স্থানীয় এক চৌকিদারকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। পুলিশ এসে পরে ঐ মেয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনে আলামিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সেটা পালন করি। কিন্তু অবাক করার বিষয় ঘটনা ঘটল একরকম আর সেটা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য আলামিনকে ব্যবহার করে স্থানীয় একটি মহলের প্ররোচনায় ঘটনার দুদিন পর আমি ও আমার ছেলেসহ আমার দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে হয়রানি মুলক মামলা দিয়েছে। আলামিন যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বিধায় আমার বিরুদ্ধে এটা স্থানীয় একটি মহলের গোপন ষড়যন্ত্র এবং বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক চক্রান্ত। তাকে জড়িয়ে গত ২৯ ও ৩০ মার্চ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুল ঘটনা আড়াল করে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এর সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করেন।

ইন্দুরকানী থানার ওসি মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, একটি মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে স্থানীয়রা ঐদিন আল আমীনকে আটকের পর মারধর করে এবং এ ঘটনায় ইন্দুরকানী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে ঐ মেয়েিেট। পরে আল আমিনকে মারধরের অভিযোগ এনে তার পিতা আলী আকবার বাদী হয়ে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলে সানিসহ ১০জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলার এজাহার ভুক্ত ২ জনকে গ্রেফতার করে ওই মামলায় গত বুধবার (৩১ মার্চ) আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap