শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১২:১৮ অপরাহ্ন
যশোরে লকডাউনের মধ্যেও চলছে এনজিওর কিস্তি আদায়। টাকা আদায়ের জন্য বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন এনজিওকর্মীরা। এমনকি ঋণ আদায়ের জন্য গ্রাহকদের সঙ্গে জোর-জবরদস্তিও করা হচ্ছে।
ফলে ঋণ পরিশোধের চাপে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা পরিবারগুলো পড়েছে চরম বিপাকে।
চাপাচাপি করে এনজিওর ঋণ আদায়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, লকডাউনের দিনগুলোতে জোর করে ঋণ আদায় কোনোভাবেই ঠিক হচ্ছে না। কিস্তির জন্য গ্রাহকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।
জানা গেছে, যশোরে জাগরণী চক্র, ওয়াইডব্লিউসিএ, উদ্দীপন, আশা ও জয়তীসহ বেশ কয়েকটি এনজিও লকডাউনের মধ্যে ঋণের কিস্তি আদায় করছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, এসব এনজিওর কর্মীরা বাড়ির ওপর এসে কিস্তির জন্য ধরনা দিচ্ছেন। চাপাচাপি ও জোরাজুরি করছেন। কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে অপমান করছেন। খবর মিলেছে শহর, গ্রাম ও শহরতলিতেও ঋণের কিস্তি আদায় করতে এনজিওকর্মীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
শহরের রায়পাড়ার বাসিন্দা হেলেনা পারভীন ও সুফিয়া বেগম জানান, ওয়াইডব্লিউসিএ এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন তারা। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন। ফলে এখন তারা কিস্তি দিতে পারছেন না।
তারা দাবি করেন, সবকিছু যখন সচল ছিল ঋণের কিস্তি তারা কখনো বকেয়া রাখেননি। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই আয় বন্ধ। ফলে কিস্তি দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে লকডাউন মানছেন না এনজিওকর্মীরা। যেকোনোভাবেই হোক, কিস্তি চান তারা।
উপশহর এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা বেগম বলেন, উদ্দীপন সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামের একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। বরাবর ঠিকমতো কিস্তি পরিশোধ করে আসছি। কিন্তু লকাডাউনের মধ্যে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। যার জন্য কিস্তি পরিশোধ করতে পারছি না। লকডাউনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা শুনতে চাইছেন না এনজিওকর্মীরা। বাড়ি এসে কিস্তির জন্য চাপাচাপি করছেন তারা।
চাঁচড়ার দারোগার বাড়ি মোড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল রাজ্জাক বলেন, জাগরণী চক্র থেকে আমার ঋণ নেওয়া আছে। লকডাউনে অন্যদের মতো আমারও আর্থিক টানাপোড়েন চলছে। যার কারণে কিস্তির টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এনজিওর কর্মী আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন।
কিস্তি আদায়ে চাপ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াইডব্লিউসিএর সাধারণ সম্পাদক শিখা বিশ্বাস বলেন, করোনায় ঋণ আদায় করা যাবে না- বিষয়টি আমরা জানি। কিন্তু তারপরও এই ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই।
তিনি বলেন, যেসব গ্রাহক বিশেষ ঋণ নিয়েছেন তাদের কিস্তি পরিশোধের জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ ঋণ নেওয়ার সময় গ্রাহকদের বলা হয়েছিল, লকডাউন, প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট যেকোনো দুর্যোগ ঘটুক না কেন ঋণের কিস্তি বকেয়া রাখা যাবে না। আর সেসব ঋণের কিস্তি আদায়ে কর্মীরা গ্রাহকদের বাড়ি যাচ্ছেন।
মুঠোফোনে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে যশোরের অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান বলেন, এনজিওর কিস্তি আদায়ের বিষয়ে এবার কোনো নির্দেশনা পাইনি। কিন্তু তারপরও ঋণের কিস্তি দিতে কাউকে বাধ্য করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে এনজিওগুলো প্রায়ই বৈঠক করে। বৈঠকেও তাদের লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় না করার জন্য বলা হয়। তারপরও এটি যখন বন্ধ হয়নি, বিষয়টি নিয়ে এনজিও ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করব। যাতে লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা হয়।