মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:২৭ অপরাহ্ন
জে আই লাভলু :
দক্ষিণাঞ্চলে ধানের পরেই দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল হিসাবে স্থান করে নিয়েছে সুপারি। লাভজনক ফসল হিসাবে এ অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি সুপারির চাষ করা হয়। এটি এ অঞ্চলের একটি আপদকালীন ফসল হিসেবেও পরিচিত। আর দক্ষিণাঞ্চলে সুপারি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ একটি নাম পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা। আর তাই এ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার থেকে বছরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার কাঁচা ও পাকা সুপারি চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু দেশেই নয়, এ সুপারি রফতানি হচ্ছে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে।
এ উপজেলায় ঘোষেরহাট, চন্ডিপুর, পত্তাশী, বালিপাড়া, বটতলা, পাড়েরহাট, পথেরহাট, লাহুরী এবং ইন্দুরকানী সদরে সপ্তাহে দু’দিন করে সুপারি কেনাবেচার হাট বসে। এদের মধ্যে সুপারি বেচা কেনার সবচেয়ে বড় মোকাম হচ্ছে ঘোষেরহাট, চন্ডিপুর হাট ও পত্তাশী বাজার।
এ উপজেলায় তিন ইউনিয়নের ১৩টি হাট বাজারের মধ্যে ৮টি বাজারে প্রতি হাটে কয়েক’শ বস্তা সুপারি কেনা বেচা হয়। হাটের দিন কাক ডাকা ভোর থেকেই এসব বাজারে চাষিরা বস্তা ও ঝুড়িতে করে সুপারি নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। আর এ কেনা বেচা চলে বিকেল পর্যন্ত।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় পাইকার ও মহাজনরা আসেন এসব হাটে সুপারি কিনতে। তাদের সাথে সুপারি কেনেন স্থানীয় পাইকাররাও। বড় হাট গুলোতে ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক বেপারি বসেন সুপারি কিনতে। দিনের কেনা বেচা শেষে সুপারি গুলো বাছাই করে গুনে হিসাব করার পর বস্তায় ভরে তারা লঞ্চ, যাত্রীবাহি ঢাকাগামী বাসে, ট্রলার ও ট্রাকে করে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, সৈয়দপুর, বগুড়া, রংপুর, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, শরিয়তপুর, নোয়াখালী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করেন।
সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে কাচা এবং পাকা সুপারি কেনা বেচা। কেউ কেউ আবার সুপারি কিনে শুকিয়ে টাডি হিসাবে পরে বিক্রি করে থাকেন। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম। তাই দাম গতবছরের চেয়ে দেড় গুন বেশি। এবার মৌসুমের শুরুতে প্রতি কুড়ি (২১০টি) পাকা সুপারি স্থানীয় বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও এখন তা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা দরে। আর কাচা সুপারি প্রতি কুড়ি ২০০ টাকা থেকে সর্ব্বোচ্চ ২৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শ্রেণিভেদে দাম কমবেশি হয়ে থাকে কাচা, পাকা দুই ধরনের সুপারির দাম। এছাড়া শুকনো সুপারি প্রতি মণ ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় পাইকারি বাজারগুলোতে।
ঘোষেরহাটের সুপারি ব্যবসায়ী ইকরামুল সিকদার,মোতালেব ও মনির জানান, এ উপজেলার মধ্যে এখন সুপারি বেচাকেনার বড় হাট এটি। প্রতি হাটে এখানে ৪০০ থেকে ৫০০ বস্তা সুপারি বেচাকেনা হয়।
চন্ডিপুর হাটের সুপারির আড়ৎদার আক্তার হোসেন জানান, এ উপজেলার মধ্যে সুপারি কেনা বেচার বড় হাট হচ্ছে এটি। শুধু চন্ডিপুর হাট থেকেই প্রায় ২০০ বস্তা সুপারি প্রতি হাটে কিনে নিয়ে যান বেপারিরা। হাট প্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার সুপারি কেনাবেচা হয় এখানে।
খোলপটুয়া গ্রামের চাষী লিটন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফলন দ্বিগুন। তবে ফলন ভাল হওয়ায় দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
সুপারি বেপারি জাহিদ গাজী জানান, এবছর সুপারির বাজার দর অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে এবার ফলন গত বছরের তুলনায় বেশি।
এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শিপন কুমার (অ: দা:)জানান, সুপারি এ অঞ্চলের একটি অর্থকরী ফসল। এ উপজেলার প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি সুপারির চাষ হয়। এবার ফলন অনেক ভাল। প্রতি বছর দাম উর্ধ্বমূখী হওয়ায় এ উপজেলার প্রতিটি বাড়িতে সুপারি গাছের চারা লাগাচ্ছেন চাষিরা।