শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

ইন্দুরকানীতে ভিডব্লিউবি’র ২৪০০ কেজি চাল জব্দ; চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

ইন্দুরকানীতে ভিডব্লিউবি’র ২৪০০ কেজি চাল জব্দ; চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

0 Shares

স্টাফ রিপোর্টার:
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ২ নং পত্তাশী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা জেপি’র আহবায়ক আলহাজ্ব মোঃ শাহীন হাওলাদারের বিরুদ্ধে সরকারি চাল আত্নসাতের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে পত্তাশী বাজারে স্থানীয় শতাধীক লোক ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের বিরুদ্ধে উপকার ভোগীদের চাল আত্নসাতের অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

তাদের অভিযোগ চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে সরকারের বরাদ্দকৃত ভিজিডি ও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের দশ কেজি চাল ঠিকমত বন্ঠন না করে তার ব্যাক্তিগত গুদামে রাখেন যা পরবর্তিতে তার সাথে থাকা ফয়সাল মাস্টারের মাধ্যমে এলাকায় এবং এলাকার বাহিরে কিছু চাল বিক্রি করেন।

এ ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুন্নেসা খানম ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করেন এবং ঘটনার ব্যাপারে সুষ্ঠ তদন্ত করে অনিয়ম ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন আকন,ইউপি সচিব মোঃ মতিউর রহমান সহ স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও সাংবাদিকবৃন্দ।
পরে ঐদিন রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুন্নেসা খানমের নির্দেশে নতুন তালা এনে গোডাউনটি আটকে রাখেন এবং অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন ।

এরপর শনিবার সকাল ১০ টায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন আকন এবং ঐ ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা মোঃ আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে গোডাউনের তালা খুলে ৩০ কেজি ওজনের ৮০ বস্তা চাল এবং ১৩৩ টি খালি বস্তা পান। পরে ইউএনও’র নির্দেশে চাল গুলো জব্দ করে গোডাউনটি পুনরায় তালাবদ্ধ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন কর্মকর্তারা।

ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে ৮০ বস্তা চাল পাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুরো উপজেলা জুড়ে রাজনৈতিক দল সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় নানা আলোচনার।

এদিকে গত শনিবার (১০ জুন) উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুন্নেসা খানম স্বাক্ষরিত নোটিশে জানা যায়, উপজেলার পত্তাশী ইউনিয়নে ২৪৩ জন উপকারভোগীর বিপরীতে ৩০ কেজি হারে ৯৭২ বস্তা চাল উপজেলার ২নং পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্য থেকে তিনি ৮৯২ বস্তা চাল বিতরণ করেছেন। কিন্তু তার পরিষদের গুদামে ৮০ বস্তা চাল অবশিষ্ট রয়ে যায়। পরে মাস্টার রোলের তালিকা মিলিয়ে তদন্ত কমিটি দেখতে পান জব্দকৃত চালগুলো ভিজিএফ এর নয়, এটা ভিডব্লিউবি এর চাল।

এ বিষয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয় ইউপি চেয়ারম্যান ভিজিএফ এর চাল বিতরণ না করে গুদামজাত করে রেখেছেন।
সূত্রে জানা যায়, চাল গুলো জানুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন কার্ড ধারী ব্যক্তির নামে ছিল। কি কারনে এসব উপকারভোগীরা নিজেদের নামের চাল এতদিনে নিতে আসেননি তার সঠিক কোন জবাব দিতে পারেননি ওই ইউনিয়নের সচিব। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চাল না পাওয়া ৬ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ চরনী পত্তাশী গ্রামের সালমা বেগম, ২ নং ওয়ার্ডের মধ্য পত্তাশী গ্রামের ফাহিমা, রাশিদা ও ৬ নং ওয়ার্ড দক্ষিন চরনী পত্তাশী গ্রামের নাসরিন আক্তার সহ আরো অনেকে চাল নিতে আসলেও তারা চাল না পেয়ে ফিরে যান বলে এসব কার্ডধারী ব্যক্তিদের অভিযোগ।


অপরদিকে পত্তাশী গ্রামের শাহাবুদ্দিন শরীফের ছেলে হাসান শরীফের কাছে সম্প্রতি ৩০০ কেজি সরকরি চাল বিক্রির অভিযোগ উঠে চেয়ারম্যান শাহীনের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ফয়সাল মাস্টারের বিরুদ্ধে। এর আগেও হাচান ফয়সালের কাছ থেকে আরো ৯ বস্তা চাল ক্রয় করেছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে একথা হাসান সরাসরি স্বীকার করেন। ফয়সাল এ সরকারি চাল কোথায় পেলেন তার সদুত্তোর পাওয়ার জন্য খোঁজ নেওয়া হয়। তবে ফয়সাল পার্শ্ববর্তী মোড়েলগঞ্জ উপজেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দকৃত চালগুলো কিনে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন বলে সাংবাদিকদের কাছে তার প্রমান স্বরূপ একটি ডিও’র কপি দেখান। তবে এটা কতটা সঠিক তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে শনিবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার কিছু দলীয় ও বহিরাগত লোক নিয়ে নিজ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। আগেরদিন শুক্রবার বিকেলে চেয়ারম্যান শাহীনের বিরুদ্ধে কেন মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে এ কারণে ঐ দিন দুপুরের দিকে তার লোকজন পত্তাশী বাজারে অবস্থানকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন, স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মজিদ ফকির,আ.লীগ নেতা আলাম ফকির ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেনকে হুমকি ও গালাগালি দেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন মেম্বার আলমগীর ।
তবে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার। তিনি জানান, আমার জানামতে এ ধরনের কোন ঘটনা ওখানে ঘটেনি।

চাল গুদামজাতের বিষয়ে প্রশ্ন করলে পত্তাশী ইউপি সদস্য মো: আলমগীর হোসেন সহ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মেম্বার অভিযোগের সুরে জানান,ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের ইচ্ছে মত পরিষদের কাজ করতেন। আমাদেরকে কোন কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করতেন না তিনি। যার কারণে এসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ মতিউর রহমান জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ৮০ জন ব্যক্তির চাল রয়েছে এখানে। ভিজিডি কার্ডধারী ব্যক্তিরা নিতে না আসায় ঐচাল গুলো গোডাউনে রাখা হয়েছিল।

পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে চাল মজুদ করে রাখার খবরে এলাকাবাসী জখন পরিষদের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তখন আমি ওই স্থানে ছিলাম না। সন্ধ্যার দিকে পিআইও বাজারের এপারে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যান। তখন ইউএনও স্যারসহ আমরা কয়েকজন মিলে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল পরের দিন কয়েকটি মিডিয়ায় খবর ছাপা হল আমার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে নাকি এলাকাবাসী। এটা কেমন কথা!

অভিযোগের বিষয়ে পত্তাশী ইউপি চেয়ারম্যান মো: শাহীন হাওলাদার জানান,যে সব উপকারভোগীরা পরিষদে চাল নিতে আসেনি তাদের চালগুলো গোডাউনে রাখা ছিল। কেউ কেউ জীবিকার সন্ধানে এলাকার বাইরে থাকায় সময় মতো চাল নিতে আসতে পারেননি। গোডাউনে রাখা অবিতরণকৃত চাল যেকোন সময় নিতে আসলে তা কার্ডধারীদের দিয়ে দেয়া হবে।
তবে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এসব অপচেষ্টা করছে বলে তিনি জানান।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আমরা শনিবার ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউন খুলে ৩০ কেজি ওজনের ৮০ বস্তা চাল দেখতে পাই। এরপর মাস্টার রোলের তালিকার সাথে মিলানো হলে এতে তেমন কোন গরমিল পাওয়া যায়নি। তবে এই চালগুলো ভিডাব্লুউবি কার্ডধারী উপকারভোগীরা নিতে আসেনি, না সঠিক সময়ে বিতরণ করা হয়নি তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। আর এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাদেরকে আগে কোন কিছু জানানো হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুন্নেসা খানম সাংবাদিকদের জানান,পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে যে চাল গুলো পাওয়া গেছে সেগুলো মাস্টার রোলের তালিকার সাথে আমরা মিলিয়ে দেখেছি। তবে এটা অনিয়ম না,চেয়ারম্যানের নিজের দায়িত্বে অবহেলার শামিল। বিষয়টি ট্যাগ অফিসারকে তার আগেভাগে জানানো উচিত ছিল। ৮০ বস্তা চাল কি কারনে গুদামে পড়ে রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap