বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
ইন্দুরকানী বার্তা ডেস্ক: ক্ষুদ্র ঋণের সাহায্যে পিরোজপুরের প্রায় ১৬ হাজার ফুল চাষী নারী-পুরুষ সাবলম্বী হয়ে উঠছে। অধিক লাভের আশায় প্রতিদিন বাড়ছে ফুলের আবাদ আর ফুল চাষীর সংখ্যা। শুধু তাই নয় সারি-সারি লাল, হলুদ, কমলা আর সাদা রংঙের সমহার দেখার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসে ফুলের মিলন মেলার দর্শনে।
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বর্হিবিশ্বে প্রায় তিনশত বছর আগে ফুল চাষের সূচনা হলেও এ অঞ্চলে ফুলের বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয় প্রায় অর্ধশত বছর আগে। স্বরূপকাঠিতে মাটি আর আবহাওয়া অনুকুল পরিবেশ থাকায় এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় এসব ফুলের চাষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুরের নেছারাবাদ স্বরূপকাঠি উপজেলার ছারছীনা, অলেংকারকাঠি, আরামকাঠি, জগন্নাথকাঠী, কুনিহারী,পান্নালস্নাপুর, সুলতানপুর, সঙ্গীতকাঠি, মাহামুদকাঠিসহ চারিদিকে দুই শতাধিক নার্সারিতে হাজারো রংঙের ফুলের সমরাহ ঘিরে আছে গ্রামকে-গ্রাম। পল্লীর মাঠ জুড়ে ফুটে আছে- ডালিয়া, গাঁদা, বেলী, গোলাপ, রজনীগন্ধা, টিউলিপ, অ্যাস্টার গোলাপ, কলাবতী, জুই, ডেইজি, ডায়াস্থান, জিনিয়া, চন্দ্রমলিস্নকা, পদ্ম, কারনেশন, কসমস, প্যানজি, সূর্যসুখী, স্টারপিটুনিয়া, পপি, অর্কিড়, সিলভিয়া, ভারবেন, লুপিংস, ফ্লক্স, পর্টুলেকা, এন্টিরিনাম লুপিংস, মনিং, ক্যালেন্ডলা, গেস্নারি, সুইটপি, ন্যাস্টারশিয়াম, হলিংকস, জারবেরা, অ্যাজালিয়াসহ শতাধিকফুল।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করা হয় এখানকার নানা জাতের ফুল। নেছারাবাদে প্রায় ১৫৩ হেক্টর জমিতে দেড় শতাধিক নার্সারিতে ১৬ হাজার শ্রমজীবী নারী-পুরুষ ফুল চাষে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ ভাবে আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। এখানকার বসতি চাষীরা অধিক লাভের আশায় ফুল চাষের আগে প্রায় ৬০-৭০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের বনজ, ফলজ ও ঔষুধী গাছের চারার কলম উৎপাদন করে আসছেন। এসব ঔষধী চারাগুলো এখন ফুলচাষের পাশাপাশি বাগানের চারপাশের কান্দিতে ভরা।
কার্তিক মাসের প্রথম দিকেই ফুলের বিজ রোপন করা হয়। রোপনের ৪০ দিনেই ফুলফোটা শুরু হলেও একটি ফুলের জীবন কাল থাকে ৪-৬দিন। সৌন্দর্য্যের প্রতীকফুলের জীবনকাল ক্ষীন হলেও বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় দিবসগুলোতে ফুলের শোভাবর্ধন ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানই সম্ভাব হয় না। কোনো-কোনো ফুলগাছ ফুলফোটার ৪১ দিনের মধ্যে গাছটি মরে যায়। আবার অনেক ফুল গাছের জীবনকাল আড়াই বছর হলেও সব ফুলের জীবনকাল এক নয়।
এ সব ফুল শুধু সৌন্দর্য্যের শোভাবর্ধন করে না এটি দেশের অর্থকরী ফসলও বটে। মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ, ঔষুধী ফুল থেকে ঔষুধ তৈরী, সূর্যমুখী ফুল থেকে সুগন্ধী তৈল উৎপাদন, টিউলিপ ও অ্যাস্টার ফুল দ্বারা বিভিন্ন ধরনে মূল্যবান সেন্ট তৈরী, সুগন্ধযুক্ত ফুলের নির্যাস থেকে উন্নতমানের পারফিউম, সেন্ট ও আতর ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এমন নানা রকম দ্রব্যাদি তৈরিতে প্রায় শতাধিক শিল্পকারখানা দেশে গড়ে উঠায় ৫৫ হাজার শ্রমজীবী মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।
সারাদেশে ফুল সংশ্লিষ্ট এ সব পণ্য বর্হিবিশ্বে রপ্তানি করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা অর্জিত হয়। কিন্তু ২০১৯-২০২০ সালের অর্থবছরে করোনার কারণে ফুলের আবাদ ও ফুল রপ্তানীতে ধস নামে। এ বছর লাভ তো দূরের কথা প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয় ফুল চাষীদের। ক্ষতিপূরণ কাটিয়ে ফের ফুলচাষে ঝুকছে চাষীরা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সুত্রে জানা যায়, ফুল চাষী, ফুল বিক্রিতা, ফুল দোকানী, ব্যবসায়ী, রপ্তানী ব্যবসায়ী, ফুল দ্বারা বিভিন্ন শিল্পকারখানায় পণ্য উৎপাদনে প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক জড়িত। করোনায় বিভিন্ন উৎসবগুলোতে ফুলের চাহিদা না থাকায় ফুল সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। তবে ফুল চাষীরা করোনার ভয়ের মাঝেও আবার আগের মত ফুল চাষে মাঠে নেমেছে। কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরো একটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে এই ফুল চাষ। ফুল অতীত কালে কেবল মানুষের মনের ক্ষুধা মেটালেও আজকের দিনে ফুল থেকে উপর্জিত টাকা দিয়ে অনেকেই পেটের ক্ষুধা মিটাচ্ছেন।