সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন

পানির নিচে অসংখ্য গ্রাম, শিশুসহ চার জনের প্রাণহানি

পানির নিচে অসংখ্য গ্রাম, শিশুসহ চার জনের প্রাণহানি

পানির নিচে অসংখ্য গ্রাম, শিশুসহ চার জনের প্রাণহানি

0 Shares

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে গতকাল বুধবার জোয়ারের পানির চাপে দেশের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুরসহ উপকূলের ১৪ জেলায় তলিয়ে গেছে অসংখ্য গ্রাম, ফসলি জমি ও মাছের ঘের। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকলাখ মানুষ। এসময় পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। উত্তাল বঙ্গোপসাগরে চরে আটকে পড়া একটি জাহাজের ১২ নাবিককে উদ্ধার করেছে বিমানবাহিনী। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জেটির পন্টুন, দ্বীপের বাঁধ ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, থেমে থেমে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এ উপজেলার প্রায় ৫/৬হাজার পরিবার। বলেশ্বর নদের শাখা কচা এবং পোনা নদী তীরবর্তী এলাকায় বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় উপজেলার তেলিখালী, নদমুলা, ধাওয়া, গৌরীপুর, ইকরি, ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়ন এবং ভান্ডারিয়া পৌর শহর প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব জানান, উপজেলায় কাঁচা, আধাপাকা ৩৫০০ এবং মোটামুটি পাকা ১৫০০ বাড়িঘরসহ প্রায় ৫০০০ বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১২/১৩শ হেক্টর জমির আউশের বীজতলাসহ ধানের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। ২৪শ খামারির মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়াও পান বরজ এবং মৌসুমি সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ২৮টি গ্রামের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, ফসলি জমি, পুকুর ও ঘের। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে কাউখালীর তিনটি ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেশি উচ্চতায় কচা নদীর পানি পাঙ্গাঁসিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, বলেশ্বর নদ তীরবর্তী বেড়িবাঁধ উপচে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাঝের চরের সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধ জোয়ারের তোড়ে সম্পূর্ণ ভেসে গেছে।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার নদী তীরবর্তী পাড়েরহাট, উমেদপুর, টগড়া, কালাইয়া, চাড়াখালী, চরবলেশ্বর, খোলপটুয়া, সাঈদখালী, চন্ডিপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ উপজেলার কয়েক হাজার বাসিন্দা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক। ভেসে গেছে ঘের-পুকুরের মাছ। ডুবে গেছে কৃষি ক্ষেত। সকালে ইন্দুরকানীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ কঁচা নদীর মোহনায় অবস্থিত পাড়েরহাট আবাসন এলাকা পরিদর্শন করতে গেলে শতাধিক লোক বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে তাকে ঘিরে ধরে শ্লোগান দেন :‘ত্রাণ চাই না, বেড়িবাঁধ চাই।’

নাজিরপুর (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৫ সহস াধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জোয়ারে সাগর ও নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, দুমকি, মির্জাগঞ্জ, দশমিনাসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধের ৩০টি পয়েন্ট বিধ্বস্ত হয়ে ও ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি এলাকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কমপক্ষে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়। কিছু কাচা ঘরবাড়ি, বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

লালমোহন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছ ভেঙে চাপা পড়ে আবু তাহের (৪৮) নামের এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কালমা ইউনিয়নের মৃধার চৌমুহনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আবু তাহের স্থানীয় গফুর পাটোয়ারীর ছেলে।

বরগুনা (উত্তর) প্রতিনিধি জানান, সাগর ও নদীতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় তলিয়ে গেছে শত শত গ্রাম, বাড়িঘর, নিম্নাঞ্চলের আবাসন প্রকল্প, ফসলি জমি, পুকুর ও মাছের ঘের। লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুটি ফেরিঘাটের (আমতলী-পুরাকাটা ও বাইনচটকী-বড়ইতলা) পন্টুন তলিয়ে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বরগুনা শহরের বিভিন্ন সড়কও প্রায় ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। ভাঙা বেড়িবাঁধই এ দুর্ভোগের কারণ বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই দায়ী করছেন তারা।

বেতাগী সংবাদদাতা জানান, পানির তোড়ে উপজেলার ৭/৮টি স্পটে বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সকালে বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের শেপনের ছেলে ইমামুল (৭) আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার পথে পানিতে পড়ে মারা যায়।

বামনা সংবাদদাতা জানান, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে প্রবেশ করায় উপজেলার আট গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। দক্ষিণ ডৌয়াতলা গ্রামের মতি জোমাদ্দারের পুত্র নান্না জোমাদ্দার (৩৫) মাছ শিকার করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

বরিশাল অফিস জানায়, জোয়ারের পানির চাপে জেলার ৪টি উপজেলায় বাঁধ, রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্ট এবং মাছের ঘের, ইরি ধান ও পান বরজের ক্ষতি হয়েছে। জেলার অপর ৬ উপজেলায় পানি বাড়লেও উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন সড়কসহ নিম্নাঞ্চল। সদর উপজেলার প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মুলাদী উপজেলার কাজীরচর এলাকায় পানির চাপে ভেঙে গেছে রাস্তা। হিজলা উপজেলায় ৩শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ধসে গেছে। শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

চিতলমারী (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, ইয়াসের প্রভাবে বাঁধ ভেঙ্গে সদর উপজেলার চিত্রা নদীর দু’পাড়ে গড়ে ওঠা ‘মিনি সুন্দরবন’ ও তার আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার অস্যংখ ঘর-বাড়িসহ চিংড়িঘের প্লাবিত হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বাড়িতে উঠানে পানিতে পড়ে কালাম গাজীর কন্যা জিনিয়াতের (৪) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামে। এদিকে ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ার দুই মিলে পৌরসদরসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়িভাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মত্স্য ঘের ও নিম্নাঞ্চল। উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ শ’ ঘের সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার ।

ভোলা (দক্ষিণ) প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন ঢালচর থেকে কোষ্টগার্ড ৫০ পরিবারকে উদ্ধার করেছে।

পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, সকাল থেকে দুবলারচর হিরণ পয়েন্ট, পক্ষীরচরসহ বিভিন্ন স্থানে আছরে পড়ে সাগরের বড় বড় ঢেউ। তলিয়ে যায় সুন্দরবনের সরকারী বন বিভাগের অফিসগুলো। জীব-জানোয়ারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেয়।

মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মোংলার প্রায় ৮শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও মোংলা বন্দরে অবস্থানরত সকল বিদেশি জাহাজের পণ্য ওঠানামা ও পরিবহণের কাজ চলেছে বলে জানান বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখরউদ্দিন।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap