রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন

ভাণ্ডারিয়া পৌর নির্বাচনে জেপি মঞ্জুর দুর্গে সাইকেলের হার;বিপুল ভোটে বিজয়ী হলো আওয়ামী লীগ প্রার্থী

ভাণ্ডারিয়া পৌর নির্বাচনে জেপি মঞ্জুর দুর্গে সাইকেলের হার;বিপুল ভোটে বিজয়ী হলো আওয়ামী লীগ প্রার্থী

0 Shares

ইন্দুরকানী বার্তা:
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলাকে বলা হয় জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর শক্ত ঘাঁটি। তার নির্বাচনী এলাকা থেকে আটবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ। মন্ত্রীও হয়েছেন কয়েক টার্ম। ৪০ বছরে মঞ্জু যে প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন,সেটিই জয়ী হয়েছে।

অথচ ১৭ই জুলাই অনুষ্ঠিত ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরেছেন জেপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মহিবুল ইসলাম মাহিম। তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর চাচাতো ভাই। বিপুল ভোট পেয়ে এখানে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফাইজুর রশিদ খসরু।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভাণ্ডারিয়া পৌর নির্বাচনে সাইকেল প্রতীকের মাহিম ও নৌকা প্রতীকের খসরু ছিলেন দৃশ্যমান প্রার্থী মাত্র। নেপথ্যে লড়েছেন স্থানীয় এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ ও তার ছোট ভাই মিরাজুল ইসলাম । তাদের মর্যাদার লড়াইয়ে ছোট এই পৌরসভায় সোমবার বড় উত্তাপের নির্বাচন হয়েছে। মঞ্জুর জামাতা যুবলীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর গত ৯ জুলাই ভাণ্ডারিয়া সফরকে কেন্দ্র করে শোডাউন নির্বাচনী উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া চাচাতো ভাইকে ভোট দিতে গত ১২ জুলাই থেকে ভাণ্ডারিয়ায় ছিলেন মঞ্জু নিজেই।

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভাণ্ডারিয়ায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে নারী-বৃদ্ধসহ বিপুলসংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সন্ধ্যায় জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খলিফা ফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খসরু ৯ হাজার ৬২৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হন। মাহিম পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার ৭১ ভোট।

এ ছাড়া বেসরকারিভাবে নির্বাচিত কান্সিলররা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে ছিদ্দিকুর রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ডে টিপু তালুকদার, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আহাদুল ইসলাম খান, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল কাদের হাওলাদার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাহীন মুন্সী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেলোয়ার সিকদার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর হোসেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মিলন এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়াস উদ্দীন। নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

জানা গেছে, ভোট দিয়ে বিকেলে যখন এমপি মঞ্জু ভাণ্ডারিয়া ত্যাগ করেন, ততক্ষণে অধিকাংশ কেন্দ্রের ফল প্রকাশ হয়ে গেছে। পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র মঞ্জুর বাড়িসংলগ্ন মজিদা বেগম মহিলা কলেজ কেন্দ্রেই সাইকেল প্রতীক নৌকার চেয়ে ১৯২ ভোট বেশি পেয়েছে। বাকি আট কেন্দ্রেই হয়েছে ভরাডুবি।

সূত্রে জানা যায়, মহাজোট সরকারের সময় মঞ্জু মন্ত্রী থাকাকালে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন মহিউদ্দিন মহারাজ। পরে তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও ছিলেন। তখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহিউদ্দিন মহারাজের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল । কিন্তু গত জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহারাজ দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় অন্তরীন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে মঞ্জু- মহারাজের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এ দ্বন্দ্ব ভান্ডারিয়ার স্থানীয় রাজনীতিতে জেপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব বাড়তে থাকে । দু’দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশও কটাক্ষ করে বিভিন্ন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেখা গেছে। শেষমেষ হামলা সংঘর্ষ এবং মামলায় রূপ নেয় দু দলের বৈরী সম্পর্কে। তবে মহিউদ্দিন মহারাজের ছোট ভাই মিরাজুল ইসলাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তার নেতৃত্বে গোটা উপজেলায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে । দিন দিন এখানে আওয়ামী লীগের শক্ত বলায় তৈরি হয়। আস্তে আস্তে ভাঙ্গতে থাকে জেপির দুর্গ।
এদিকে পৌর নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী ফাইজুর রশিদ খসরু জোমাদ্দারকে বিজয় করতে মহারাজ এবং মিরাজুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বেশ আটঘাট বেধে নির্মাচনী মাঠে নামেন। এই পৌর নির্বাচনে বিজয় নিজেদের ঘরে তুলে আনা দুই ভাইয়ের চ্যালেঞ্জ ছিল বলে মনে করছেন স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক মহল। তারা মনে করছেন এ নির্বাচন ছিল আসলে গুরু শিষ্যের লড়াই । আর এ নির্বাচনকে ঘিরে আশপাশের উপজেলার মানুষও মুখিয়ে ছিলেন তাদের জয় পরাজয় নিয়ে।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap