সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন

অভাবের সংসারে হৈমন্তীর সাফল্যে সবাই খুশি

অভাবের সংসারে হৈমন্তীর সাফল্যে সবাই খুশি

0 Shares

জে আই লাভলু:
হৈমন্তী রানী দত্ত (১৫)। পিতা হারা একটি অভাবী পরিবারের মেয়ে। শত দারিদ্রতাকে পেছনে ফেলে নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর মায়ের অনুপ্রেরণায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ইন্দুরকানী উপজেলার কলারন চন্ডিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। বিদ্যালয়টি থেকে এবার ৭২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও ১৭ জন বাদে বাকি সবাই কৃতকার্য হন। তবে কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পান শুধু হৈমন্তী একাই।

সংসারের দৈনন্দিন অভাব অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা হৈমন্তী নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও হাল ছাড়েননি পড়াশুনার। হৈমন্তীর পিতা শিশির চন্দ্র দত্ত স্থানীয় চন্ডিপুর হাটে একটি দর্জির দোকানে কাজ করতেন। এছাড়া বাড়ির পাশে একটি ছোট্র চায়ের দোকান ছিল তার। স্ত্রী আর দুই মেয়ে সহ চার সদস্যের টানাপড়েনের সংসারে ছিলনা আর্থিক সচ্ছলতা। গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর ব্রেন্ড টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শিশির চন্দ্র। মৃত্যুর আগে সহায় সম্পত্তি বলতে বসতবাড়ি আর ফসলী জমি মিলিয়ে কিছু জমি ও একটি গাভী রেখে যান তিনি। এ অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন স্মৃতি রানী দত্ত। নিজেদের ভরণ পোষণ আর দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বহন করাই যেন তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সংসারের হাল ধরতে নিজেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে হয় তাকে। পরিবারে বর্তমানে আয়ের উৎস বলতে একটি দুধের গাভি। এই গাভী থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লিটার দুধ বিক্রি করার আয়ের পয়সায় কিছুটা যোগান হয় সংসার খরচের। এছাড়া বছরান্তে জমি থেকে যেটুকু ফসল পান তাতে তেমন কিছুই হয়না তাদের।

মাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যাওয়ার কারনে হৈমন্তীকে অনেক সময় বাড়িতে থাকতে হত বিধায় নিয়মিত স্কুলে যাওয়া হতনা তার। এজন্য পরে সহপাঠিদের কাজ থেকে ক্লাসের পড়া বুঝে নিতেন হৈমন্তী। হৈমন্তীর ছোট বোন মৌমিতা দত্ত (৭) স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সংসারিক কাজে মাকে সহযোগীতা করা, গাভী পালন এবং নিজের পড়াশুনার ফাঁকে ছোট বোনকেও লেখাপড়ায় সহযোগীতা করেন তিনি।

শত কস্টের মাঝেও হৈমন্তীর এ অভাবনীয় সাফল্যে তার মায়ের চোখে মুখে এখন খুশির কান্না। বিদ্যালয়ের সহপাঠি, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পাড়া প্রতিবেশীরাও দারিদ্রতার মাঝে তার এ সাফল্যে আনন্দিত।

হৈমন্তী প্রতিবেদককে বলেন, আমার মা পাশে ছিল বিধায় নানা সমস্যার মধ্যেও পড়ালেখা চালিয়ে গেছি। সবার দোয়ায় আমি এবার জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার ইচ্ছা ভালো একটি কলেজে ভর্তি হওয়া এবং উচ্চ শিক্ষা অর্জণ করা। আমি ভবিষ্যতে পড়াশুনা করে একজন কলেজ শিক্ষক হতে চাই।

ঐ বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাধেশ্যাম বাবু বলেন, তারা দুই বোনই পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী। হৈমন্তী নিজের ইচ্ছায় অনেক কস্ট করে পড়ালেখা করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে দারিদ্রতাই ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া ও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই ওর জন্য এখন প্রধান বাধা বলে মনে করেন তিনি।

হৈমন্তীর মা স্মৃতি রানী দত্ত বলেন, আমার মেয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারে টুকিটাকি কাজ করে আমাকে সহযোগীতা করত। ওর বাবা নেই তাই সবকিছু আমাকেই দেখতে হয়। অভাবের সংসার। মেয়েদের দুবেলা ভালমন্দ খেতে দিতে পারিনা। কিভাবে এখন মেয়েটাকে একটা ভাল কলেজে ভর্তি করাবো সেই টেনশনে আছি। কারন অভাব অনটনের সংসারে মেয়েকে ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার খরচ বহন করার মত সামর্থ আমার নেই।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার জানান, হৈমন্তী একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। সে অনেক মেধাবী। তার বাবা নেই। সে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রাইভেট পড়ার খরচ যোগাতে পারবেনা বিধায় সে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। বেশির ভাগ সময় সে বাড়িতে বসে পড়াশুনা করতো। তার নিজের চেষ্টাই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। হৈমন্তীর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুন্নেসা খানম বলেন, অভাব অনটনের মাঝেও হৈমন্তী নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভাল ফলাফল অর্জণ করেছে। পরীক্ষায় তার এ সাফল্যের কথা শুনে আমি হৈমন্তী ও তার মাকে আমার অফিসে ডেকে ছিলাম। ভালো ফলাফল অর্জণের জন্য অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি হৈমন্তীর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির বিষয়ে সব রকম সহযোগীর আশ্বাস দেন তিনি।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap